ভেবে দেখুন, একেকটা টেকটনিক প্লেট, যার বিস্তৃতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি গোটা মহাদেশের সমান, সেগুলো প্রসারিত হচ্ছে।
Published : 05 May 2024, 06:42 PM
পৃথিবীর পাথুরে ল্যান্ডস্কেপ আসলে বিভিন্ন টেকটনিক প্লেটের জটিল ঢেউখেলানো এক মাস্টারপিস শিল্পকর্ম। এই প্লেটগুলো কীভাবে পাহাড় ও সমুদ্রের গভীরতায় ধাক্কা খায় বা আলাদা হয়ে যায়, তা আমাদের জানা।
তবে, যা এতদিন আমদের জানা ছিল না তা হল– প্লেটের নিচে এই ‘ভূতাত্ত্বিক ছন্দবদ্ধ দোলে’র কারণটা কী?
একেই বলা হচ্ছে ‘ম্যান্টল’, যা পৃথিবীর লুকানো এমন এক স্তর, যেটি বিস্ময়কর উপায়ে ভূপৃষ্ঠকে প্রভাবিত করে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জার্নাল অফ জিওফিজিক্যাল রিসার্চ: সলিড আর্থ’-এ প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় পৃথিবীর এ লুকানো জগৎ নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন সায়মন এন স্টিফেনসন ও তার গবেষণা দল।
এজন্য ভূপৃষ্ঠ থেকে ডেটা সংগ্রহ করার পাশাপাশি ভূত্বকের পুরুত্ব ও ভূমিকম্পের ফলে প্লেটের স্থানচ্যুতির বেগের ওপর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তৃত পরিসরে তথ্যভাণ্ডারের সংকলন করেছেন গবেষকরা।
এ তথ্যের সঙ্গে, ভূপৃষ্ঠ গঠনে কীভাবে ম্যান্টলের তাপমাত্রা ও রসায়ন ভূমিকা রাখে, সে রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছেন গবেষকরা। একে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘রিসাইডাল টপোগ্রাফি’।
ভেবে দেখুন একেকটা টেকটনিক প্লেট, যার বিস্তৃতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি গোটা মহাদেশের সমান, সেগুলো প্রসারিত হচ্ছে। এবং এই ঘটনা কেবল প্লেটগুলোর প্রান্তে ঘটছে না, একইসঙ্গে ঘটছে প্লেটগুলোর মাঝামাঝি এলাকাতেও।
এমন ঘটনা দুই কিলোমিটার থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে, যাকে পৃথিবীর বিভিন্ন ল্যান্ডস্কেপে ম্যান্টলের ‘আঙুলের ছাপ’ও বলা যায়।
আফার-ইয়েমেন-লোহিত সাগর, পশ্চিম-উত্তর আমেরিকা ও আইসল্যান্ডের মতো অঞ্চলের উচ্চতা প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, কী ধরনের অঞ্চলগুলোর ম্যান্টল অনেক বেশি গরম।
অন্যদিকে, কৃষ্ণ সাগর, ক্যাস্পিয়ান ও উরাল সাগরের কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন বেসিনের গভীরতা দেড় কিলোমিটারের বেশি। এমনকি পূর্ব ইউরোপীয় সমভূমিতেও, যেখানে ম্যান্টলের তাপমাত্রা খুব কম।
এইসব ম্যান্টলচালিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ভূতাত্ত্বিক নানা প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা ক্ষয় ও পাললিক জমিয়ে রাখে, এমনকি পৃথিবীর ল্যান্ডস্কেপ লাখ লাখ বছর ধরে কীভাবে বিবর্তিত হয়, তাতেও প্রভাব ফেলছে।
এ ছাড়াও, প্লেটের সীমানা থেকে দূরের ‘ম্যাগমাটিজম’ অর্থাৎ ‘অগ্নুৎপাত থেকে নির্গত ম্যাগমা’ ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্যান্টলের মধ্য দিয়ে এদের রহস্যময় প্রবাহ সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে এ গবেষণায়।