শীর্ষ দুই দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় শহরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
Published : 01 Apr 2023, 09:45 PM
নাটোরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শহরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের আলাইপুর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষ বাঁধে।
কিছুক্ষণ পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় বলে জানান নাটোর সদর থানার এসআই মো. সাজ্জাদ হোসেন।
সংঘর্ষে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফসহ ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দলটির স্থানীয় নেতা দেওয়ান শাহীন।
তিনি আরও জানান, আহতদের মধ্যে শরিফ ও যুবদল নেতা রনি ব্যাপারীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অপরদিকে, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের হামলায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব ও শহর যুবলীগের সভাপতি সায়েম হোসেন উজ্জ্বল আহত হয়েছেন। তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইফতার মাহফিল ও অবস্থান কর্মসূচির জন্য নাটোর উপশহর মাঠে মঞ্চ তৈরি করেছিল বিএনপি। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই মঞ্চে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় দৃর্বত্তরা। যদিও একই স্থানে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে জেলা বিএনপি।
অপরদিক, শহরে মাইকিং করে একই মাঠে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। একই সময়ে একই জায়গায় শীর্ষ দু’দলের কর্মসূচিকে ঘিরে নাটোর শহরজুড়ে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছিল।
শনিবার দুপুর ২টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ১০ দফা দাবিতে শহরের আলাইপুর বিএনপির কার্যালয়ে সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধিসহ সরকারের সমালোচনার এক পর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কর্মসূচি বন্ধ করে নেতা-কর্মীদের কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ আসে।
একই সময়ে জেলা আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশে নামে। সমাবেশের একটি মিছিল বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশের বাধার সম্মুখিন হয়।
পুলিশের বাধা পেয়ে কিছু নেতা-কর্মী জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এগিয়ে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে গুলির শব্দ শোনা যায়।
পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ছাদ থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে।
অন্যদিকে, রাস্তা থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
শীর্ষ দুই দলের সংঘর্ষের ঘটনায় নাটোর শহরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের আলাইপুর এলাকায় অবস্থানে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে আলাইপুরে সড়কের একপাশের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গুলির শব্দের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার এসআই সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “শব্দতো আমিও শুনেছি; এখনতো পটকা ফোটালেও গুলির মত শব্দ হয়।“
সংঘর্ষের পরপরই জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন নেতারা।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দেওয়ান শাহিন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবস্থান কর্মসূচি অংশগ্রহণের সময় হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। প্রশাসনের অনুরোধ আমাদের ইফতার পার্টি বন্ধ করেছি। তারপরও গত দুদিন মঞ্চ ভাংচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আওয়ামী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।“
অপরদিকে, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, “বিএনপির হামলায় আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।”