হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু আসছে।
Published : 16 Oct 2022, 11:30 PM
ভোলায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে; এতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, সদর ও ছয় উপজেলায় গত এক সপ্তাহে এক হাজারের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাদের ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
এই হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা মাত্র ১৫টি। ফলে এক বেডে একাধিক রোগী এবং হাসপাতালে বারান্দা ও ফ্লোরে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে ভোলা সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৫৭ শিশু ভর্তি হয়েছে বলে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
রোববার সকালে ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলার বারান্দায় ডায়রিয়ার রোগীর জন্য কোনো জায়গা ফাঁকা নেই। এই অবস্থায় চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
দৌলতখান উপজেলার ফরহাদ হোসেন বলেন, তার এক বছর বয়সী ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে কোনো উন্নতি না হওয়ায় এখানে স্থানান্তর করা হয়।
“এখানে এসে দেখি, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো সিট খালি নেই। তাই বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছি।”
একই অবস্থার কথা জানান তজুমদ্দিন উপজেলার নুসরাত বেগম। ডায়রিয়া হওয়ার পর তার শিশুকন্যাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
নুসরাত বলেন, তিনি এখানে এসে দেখেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কোনো সিট খালি নেই। তাই বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ইয়ানুর বেগম জানান, তার শাশুড়ি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে বাড়িতে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। কোনো উন্নতি না হওয়ায় এখন হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। কোনো সিট খালি না পেয়ে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল মজিদ শাকিল বলেন, “আবহাওয়ার পরিবর্তন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং পুকুরের পানি কমে যাওয়ায় ভোলায় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তবে হাসপাতালে যথেষ্ট পরিমাণ স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ রয়েছে।
এদিকে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো কোনো বেডে দুই-তিনজন নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুকেও একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে।
হাসপাতালের পুরাতন ভবনে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২৫টি। বর্তমানে এখানে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ রোগী। ফলে শিশুদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান অভিভাবকরা।
ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল মজিদ শাকিল বলেন, “প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৩০০ থেকে ৩৫০ রোগী আসে। এর মধ্যে ১০০ থেকে ১৫০ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এদের মধ্যে যারা গুরুতর তাদেরই শুধু ভর্তি করা হচ্ছে।”
শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সেবিকা মৌসুমী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে শিশু রোগীদের চাপ বেড়েছে। আমাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে আমরা সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছি।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. লোকমান হাকিম বলেন, “ভোলায় হঠাৎ করেই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী হওয়ায় বাধ্য হয়ে বারান্দায় ও ফ্লোরে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “হাসপাতালে এতো রোগীর চাপ থাকায় চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকটা হিমসিম খাচ্ছি। তবে নতুন ভবন চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ভোলা সদর হাসপাতালে এখন ১০ জন ডেঙ্গু রোগী আছে। এর মধ্যে সাতজন পুরুষ ও তিনজন নারী।