ঠিকাদারের ভাষ্য, “তারা আমাকে মারছিল আর বলছিল, ‘তোর এমপি কই? তোরে বাঁচাইতে আসতে বল’।”
Published : 03 Apr 2024, 05:41 PM
কুমিল্লায় সরকারি দপ্তরের প্রকৌশলীর সামনে এক ঠিকাদারকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতিসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বুধবার সকালে ঠিকাদার মাসুদুল ইসলাম বাবু (৫২) বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন বলে ওই থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন জানান।
মামলায় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টুসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারভুক্ত অন্য তিন আসামি হলেন- মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী নগরীর ধর্মসাগরপাড় এলাকার সোহাগ (৪০), রেসকোর্স এলাকার ইয়াছিন (৩৭) এবং শাসনগাছা এলাকার জালাল (৩৮)।
গত সোমবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে নগরীর টমছমব্রিজ এলাকায় অবস্থিত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ওই ঠিকাদারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে মামলায় বলা হয়।
ঠিকাদার বাবুর অভিযোগ, “সোমবার দুপুরে কাজের বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যাই। তখন আমার পিছু নেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলামের অনুসারীরা।
“২০-২৫ জনের একটি দল আমাকে পেছন থেকে ধরে ফেলে। তারা আমাকে ধরে কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে বেদম মারধর করা হয়।”
মাসুদুল ইসলাম বাবু সাংবাদিকদের বলেন, “তারা আমাকে সবাই লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারে। রিন্টুর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী ইয়াছিন, সোহাগ, জালাল আমাকে প্রথম মারা শুরু করেন। সবগুলো লাঠি তারা আমাকে মেরেই ভেঙেছে। এ সময় কয়েকজন আমার মুখে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। আমি দিশাহারা হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করি। কিন্তু প্রকৌশলীর সামনেই সেখানে আমাকে আবার মারধর করা হয়। কেউ আমাকে বাঁচাতে আসেনি। পরে আমি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। সেখান থেকে কয়েকজন ধরে নিয়ে হাসপাতালে পাঠান।”
এ ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি জহিরুল ইসলাম রিন্টু কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের অনুসারী।
ঠিকাদার মাসুদুল ইসলাম বাবু সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মাসুদুলের বাসা কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়া জোড়পুকুরপাড় এলাকায়। প্রায় ৩০ বছর ধরে ঠিকাদারি করছেন তিনি।
ঠিকাদারের ভাষ্য, “তারা চায় সিন্ডিকেট করে রাখতে। যেন কেউ কাজ না নিতে পারে। তারা আমাকে মারছিল আর বলছিল, ‘তোর এমপি কই? তোরে বাঁচাইতে আসতে বল। আর টেন্ডারের জন্য আসবি? তোদের বহুত সুযোগ দিছি। আর নাহ্। তার হাত-পা ভাঙ।’ এ সময় সবাই আমার হাত-পায়ে আবার মারতে শুরু করে।”
এসব বিষয়ে জানতে কুমিল্লা মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ওসি মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, “মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।”