নাটোর থেকে কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি; বাস টার্মিনালে বাস রেখে চালক ও হেলপারদের অলস সময় পার করতে দেখা যায়।
Published : 01 Dec 2022, 10:22 PM
বিএনপির গণসমাবেশের রাজশাহী বিভাগে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে বিভাগের অন্যান্য জেলার মতো নাটোরেও যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হয়েছে।
সড়ক ও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে রাজশাহী বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
শনিবার নাটোর শহরের কানাইখালীতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে রাজশাহী বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ সভার ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাটোর থেকে আন্তজেলা ও ঢাকাগামী কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি। বাসের টার্মিনালে সারিবদ্ধভাবে বাস রেখে অলস সময় পার করতে দেখা যায় ড্রাইভার ও হেলপারদের। দুপুরের পরে মহাসড়কে দুই চারটি পণ্যবাহী ট্রাক দেখা যায়। তবে মহাসড়কের প্রতিটি এলাকাতেই দেখা যায় অটোরিকশা, অটোভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা ও তিন চাকার যানবাহনের।
নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া রাজ্জাকমোড়, গুরুদাসপুরের কাছিকাট নয়াবাজার, সদরের বড় হরিশপুর বাইপাস বেলঘড়িয়া বাইপাস ও মাদ্রাসা মোড়, সিংড়ার ডাল সড়কসহ জেলার মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিনে ভোগান্তির চিত্র পাওয়া গেছে।
এ সময় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, অটোভ্যান ও তিন চাকার যানবাহনে চলাচলের চিত্র দেখা যায়। ব্যাগ-বস্তা নিয়ে গাড়ির অপেক্ষায় যাত্রীদের ভোগান্তির চিত্রও চোখে পড়ে।
গুরুদাসপুরের কাছিকাটা থেকে মো. সালমান জানান, কাছিকাটা থেকে সিরাজগঞ্জের ভাড়া ৮০ টাকা; কিন্তু এখন ১৫০ টাকা ছাড়া সিএনজি অটোরিকশা যাবে না। রিজার্ভে গেলে ৬শ টাকা।
বড়াইগ্রাম বাস টার্মিনালে মো. তৌহিম ও মো. সাকিলকে রাজশাহী যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় বসে ছিলেন। বাস না পেয়ে ট্রাকে যাওয়ার জন্য ট্রাক থামালে ৪০০ টাকা ভাড়া চেয়েছে বলে জানালেন তারা।
আনসার সদস্য মো. মিন্টুর চোখে মুখে হতাশা দেখা গেল বড়াইগ্রামের রাজ্জাক মোড়ে।
তিনি বলেন, “ঢাকা যেতেই হবে। বাস নাই। দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছি; এখনও সিরাজগঞ্জের কোনো গাড়ি পাইনি।”
চিনিডাঙার বিলে সিরাজগঞ্জ থেকে আমন ধান কাটতে এসেছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম, খালেক প্রমানিকসহ ১০ শ্রমিকের একটি দল। কাজ শেষ করে বনপাড়া হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে গাড়ির জন্য বসে থেকে না পেয়ে পণ্যবাহী ট্রাককে হাত নেড়ে থামতে বলছেন তারা। অথচ অনেক চেষ্টার পরে কোনো গাড়িতেই উঠার সুযোগ হয়নি তাদের।
বাবার অসুস্থতার খবর শুনেই বনপাড়া বাইপাসে এসেছেন ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম। যেতে হবে চট্রগ্রাম; অথচ কোনো গাড়ি নাই।
ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে রবিউল বলেন, “বাস না থাকায় খুব বিপদে পড়ে গেলাম। জানি না গিয়ে বাবার তাজা মুখটা দেখতে পারবো কিনা।”
জেলার হয়বতপুর এলাকার অটোচালক মো. গোলাম রসুল বলেন, “আজকে অটোর ভাড়া একটু বেশি। হয়বতপুর থেকে নাটোরের ভাড়া ২০ টাকা; কিন্তু আজকে ৪০টাকা। অনেকই ৫০ টাকাও নিচ্ছে।”
কয়েন বাজার এলাকার মো. মমিনুল ইসলাম বাস না পেয়ে ২৫০ টাকা দিয়ে রাজশাহী থেকে নাটোর এসেছেন অটোতে। পাবনা যাওয়ার অপেক্ষা বসে আছেন নাটোর বাস টার্মিনালে।
তিনি বলেন, “ভোগান্তি শুধু আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের। গরিব মানুষ আমি, কেন এত টাকা গাড়ি ভাড়া দেব বলেন?”
মাদ্রাসা মোড় এলাকায় নীরবসহ আরও ১০ জন সেনাসদস্য প্রশিক্ষণ শেষে কাদিরাবাদ কান্টনমেন্ট থেকে অটোভ্যানে ব্যাগ-বস্তা বেঁধে এসেছেন নাটোরে বগুড়া কান্টনমেন্টে যাওয়া উদ্দেশ্য। একটি মিনি ট্রাককে ডাকেন; যাবে না উত্তর আসায় বিরক্তি প্রকাশ করেন তারা।
রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে ব্যবসার কাজে রংপুর যেতেই হবে জিয়াউর রহমানকে। অটোতে নাটোর মাদ্রাসামোড়ে এসে সিএনজি অটোরিকশাওয়ালা বগুড়ার ভাড়া বেশি চাইতেই তিনি বললেন, “২০০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা? এইটা কোনো কথা!”
বিএনপি বলছে, তাদের ৩ ডিসেম্বরের কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে এই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
তবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সমাবেশ ব্যর্থ করতে পারবে না বলে মনে করেন বিএনপির রাজশাহীর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
তিনি বলেন, “তাদের কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে এই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। যতই ধর্মঘট চলুক, বিএনপির সমাবেশ সফল হবে।”
বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে আসছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর [সাংগঠনিক বিভাগ], সিলেট ও কুমিল্লায় [সাংগঠনিক বিভাগ] সমাবেশ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার সমবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট হয়নি। তবে ময়মনসিংহের সমাবেশের সময় বাস চলাচল করেনি।
বাকি রয়েছে রাজশাহী ও ঢাকার সমাবেশ। ঢাকায় বিএনপির এই সমাবেশ ডাকা হয়েছে আগামী ১০ ডিসেম্বর।