গ্রামের সব বাড়ি থেকে চাল ও অর্থ তুলে এ উৎসবের আয়োজন করা হয় বলে জানান আয়োজকরা।
Published : 13 Nov 2023, 11:09 PM
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিন্নি উৎসব হয়েছে। নতুন চাল, চিনি, গুড় আর দুধ দিয়ে রান্না করা এ শিন্নি খেতে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।
সোমবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে এলাকাবাসীর সহায়তায় (স্থানীয় ভাষায় গাঁওয়াইল্যা শিন্নি, খোদার শিন্নি) রান্না করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, গ্রামের মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধি, মছিবত থেকে মুক্তি এবং সমৃদ্ধি কামনায় এই শিন্নি উৎসব করা হয়। উৎসবের বেশ কয়েকদিন আগে থেকে গ্রামবাসী রাতে জিকির আজগার করেন। শিন্নি উপলক্ষে গ্রামে প্রাণবন্ত এক পরিবেশ তৈরি হয়।
অর্থনৈতিক অবস্থা ভেদে জনপ্রতি ২০ থেকে ৫০০ টাকা ও সব বাড়ি থেকে চাল দিয়ে উৎসবে অংশ নেন গ্রামবাসী। শিন্নি তৈরিতে কোনো লবণ দেওয়া হয় না। দিনভর রান্নাবান্না শেষে সন্ধ্যায় আশপাশ গ্রাম থেকে আগত মানুষজনের মাঝে শিন্নি বিতরণ করা হয়।
আশেপাশের লোক ছাড়াও নিজ গ্রামের মানুষ শিন্নি খেয়ে থাকেন বলে জানান স্থানীয় জুলমত আলী খান, আলামত খান, রশিদ খান ও শহিদ খান।
আয়োজক জুলমত আলী বলেন, “বাপ দাদার আমল থেকেই এই শিন্নি হয়। বালা, মছিবত, বিপদ আপদ, কলেরা থেকে বাঁচার জন্য এই শিন্নি করতেন আমাদের পূর্ব পুরুষরা।”
কথিত আছে এক থেকে দেড়শ বছর আগে এই গ্রামে ডায়রিয়া-কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়; পরে এক ফকির এসে শিন্নির আয়োজন করার পরামর্শ দেন বলে জানান আয়োজক আলামত খান।
তিনি বলেন, “সেই সময় শিন্নি উৎসব পালন করা হলে গ্রামবাসী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই গ্রামের লোকজন প্রতি বছর এ উৎসব পালন করে আসছেন।”
এর আগে ৯ নভেম্বর মানিকগঞ্জ শহরের পশ্চিম সেওতা ও ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের কুন্দুরিয়া গ্রামে হাজারো মানুষের সমাগমে ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিন্নি উৎসব পালন করা হয়।
পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য হিসেবে তারা এ উৎসব পালন করেন বলে জানিয়েছেন শহরের পশ্চিম সেওতা এলাকার প্রবীণ মোহাম্মদ আলী।
শত বছরের বেশি সময় ধরে এ উৎসব হয়ে আসছে বলে হরিরামপুরের বলড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন জানান।