শেষপর্যন্ত নিজের একমাত্র ষাঁড় গরুটি বিক্রি করে তিনি সেই এনজিওর ঋণ মেটান।
Published : 26 Jul 2023, 11:20 PM
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকা শোধ করে এক মণ দুধে গোসল সেরে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন এক রাজমিস্ত্রি।
মঙ্গলবার বিকালে গোসলের পর উপজেলার জাঙ্গালিয়াকান্দা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৩৫) প্রতিজ্ঞা করেছেন, “জীবনে আর কোনোদিন সমিতি বা এনজিও থেকে ঋণ নেব না।”
শহিদুলের দুধ দিয়ে গোসলের ছবি আপলোড করে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আলোচনা করছেন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাছপালা ঘেরা উঠানে মধ্যে বসে শহিদ দুধ দিয়ে গোসল করছেন। তাকে ঘিরে রেখেছে কয়েকজন প্রতিবেশী। সামনের একটি বড় সিলভারের পাত্রে দুধ রাখা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা প্রতিবেশি সাইফুল ইসলাম বলেন, তিন মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার শহিদুলের। প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন শহিদুল।
ঋণের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও সংসারের টানাটানিতে তিনি তা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছিলেন না। ফলে তিনি এনজিও কর্মকর্তাদের চাপের মুখে পড়েন। এর মধ্যে ঘরের হাঁস-মুরগি বিক্রি করে কিস্তির কিছু টাকা পরিশোধ করেন।
এদিকে শহিদুলের নিয়মিত কাজ মিলে না। ফলে পাঁচজনের সংসার চালাতেই তাকে হিমসিম খেতে হয়। তার উপর সাপ্তাহিক কিস্তির চাপ তাকে মানসিকভাবে অস্থির করে তোলে। এই অবস্থায় তিনি নিজের পেশাগত কাজও ঠিকমত করতে পারছিলেন না।
শেষপর্যন্ত নিজের একমাত্র ষাঁড় গরুটি বিক্রি করে তিনি সেই এনজিওর ঋণ মেটান।
সোমবার আলাপে আলাপে বিষয়টি শহিদুল তাকে বলেন বলে জানান বন্ধু হাবিবুল্লাহ পাহাড়ি। তখন তিনি শহিদুলের ছবি দিয়ে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে তিনি জানান, ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ায় শহিদুল মঙ্গলবার বাড়িতে দুধ দিয়ে গোসল করবেন।
হাবিবুল্লাহ পাহাড়ি বলেন, এজন্য শহিদুল দুধ সংগ্রহ করেন এবং বিকালে তার বাড়ির সামনে আশপাশের লোকজনও ভিড় করেন। তাদের সামনেই তিনি গোসল সারেন।
এ সময় সেখানে সাইফুল ও হাবিবুল্লাহ ছাড়াও আব্দুর রহমান, নজরুল ইসলাম, আরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
কোন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন তার নাম প্রকাশ করতে চাননি শহিদুল।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলাম না। কিন্তু ওই এনজিও থেকে কিস্তি পরিশোধে খুব চাপ ছিল। তাই গরু বিক্রি করে ঋণমুক্ত হয়ে দুধ দিয়ে গোসল করি।
“এরপর জীবনে কখনো কোনো সমিতি বা এনজিও থেকে ঋণ নেব না বলে শপথ করেছি।”