বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থী প্রতিপক্ষ নয়: শাবি উপাচার্য

সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল বিভাগের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2023, 06:04 PM
Updated : 2 March 2023, 06:04 PM

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষের সংস্কৃতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষের এই সংস্কৃতি রয়েছে। শিক্ষার্থী এবং এলামনাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রতিপক্ষ মনে করে।

সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল বিভাগের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বের প্রধান অতিথির ভিডিও বার্তায় কথা বলেন বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

এরপর উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য শেষে তিনি রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

বক্তব্যে ফরিদ উদ্দিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ নয়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা। কিন্তু আমি যুক্তির সাথে বলছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংস্কৃতি আছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাতদিন শিক্ষার্থীদের সুবিধা নিশ্চিতের জন্য কাজ করে যাচ্ছে; কিন্তু কিছু ভুল মেসেজ তাদের (শিক্ষার্থীদের) কানের মধ্যে আছে বলে মনে করেন ফরিদ উদ্দিন।

তিনি বলেন, “এজন্য বেশির ভাগ সময় দেখা যায় যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লেখালেখি করে। তাছাড়া যারা এলামনাই আছে, তারা অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিপক্ষ মনে করেন।”

কিন্তু এটা করা ঠিক নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক ফরিদ।

শিক্ষকদের উদ্দেশে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, “শিক্ষকরা রাতদিন কষ্ট করে গবেষণা করেন। এই গবেষণার সাথে আপনারা শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করেন। শিক্ষার্থীরা গবেষণার সাথে সম্পৃক্ত হলে, যারা বিদেশে পিএইচডি করতে যান তারা সকলেই অল্প সময়ের ভিতরে পিএইচডি সম্পন্ন করতে পারেন।”

তিনি বলেন, “এটাই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে অনার্স এবং মাস্টার্সে শিক্ষার্থীদেরকে থিসিস করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু এরকম সিস্টেম নাই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ৭৫ জন তরুণ সহকর্মী বিদেশে পিএইচডি করতে গেছেন। এটা তাদের যোগ্যতা দিয়ে গেছেন, মেধা দিয়ে গেছেন। তারা ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ নিয়ে গেছেন। আমরা সেরার সেরা শিক্ষক নিয়োগ করেছি বলে তারা তাদের যোগ্যতা ও মেধার বলে বাইরে যেতে পারছেন।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর বানানোর জন্য। আর এই স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগররা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হবে। আগে ছিল ডিজিটাল, এখন স্মর্ট গ্রাজুয়েট হয়ে তোমরা দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে অবারিত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন বলেন, “তোমরা এই সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে, পড়াশোনার পাশাপাশি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে নিজেদেরকে বিকশিত করে নেবে বলে প্রত্যাশা করি।”

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “তোমাদের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ব না থাকে মানবিক গুণাবলি না থাকে তাহলে তোমরা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারবে না।

‘দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য’ – এই প্রবাদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “লেখাপড়া শিখে মহাপণ্ডিত হলে কোনো লাভ হবে না যদি তুমি মানুষ না হতে পার। সেজন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ফরিয়াদ রাখছি যে মানবিক গুণাবলি যেন তোমাদের মধ্যে থাকে। তোমরা যেন কারো সাথে নিষ্ঠুর আচরণ না করো। তোমরা যাতে এমন কিছু না করো যেটা কিনা আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থি। এজন্য আমি তোমোদেরকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

সিইই বিভাগের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সিইই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মিজবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মো. শামীম জেড বসুনিয়া, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড সায়েন্সস অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ইমরান কবির।

আয়োজকরা জানান, অনুষ্ঠানের প্রথমদিনে দেশের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘এক্সিট ২০২৩’ নামক একটি জাতীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সিইই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া তৃতীয় দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।