দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
Published : 27 Apr 2023, 12:22 AM
ফরিদপুরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন–বিএডিসির দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তারা মানববন্ধন করেন। এর আগে তারা বিএডিসি (সেচ) কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করার চেষ্টা করলে বাধার মুখে পড়েন। তখন স্থান পরিবর্তন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান।
ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের একটি অংশের নেতা-কর্মীরা গত ২১ এপ্রিল বিএডিসিসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দরপত্র অনিয়মের বিরুদ্ধে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। ওইদিন তারা বিএডিসি (সেচ) অফিসের সামনে বুধবার মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিলেন।
বুধবার দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনিরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে মনিরুজ্জামান মনির ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জামালউদ্দিন কানু বক্তব্য রাখেন।
অন্যদের মধ্যে ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য সাইদুর রহমান বাবলু, সাইদুর রহমান, আবুল হোসেন, ইকবাল চৌধুরী, এস এম কামাল, শরীফ ইমরান ও যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার সোহাগ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান মনির স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে ফরিদপুর বিএডিসির সেচ প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করা এবং প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পংকজ কর্মকারের দুর্নীতি তদন্তের দাবি জানানো হয়।
অভিযোগে বলা হয়, বিএডিসির ফরিদপুর সেচ প্রকল্পের পরিচালক পংকজ কর্মকার ফরিদপুর হারোকান্দি সেচ ভবনে অফিস করেন। তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকা থাকেন। প্রতিটি টেন্ডার আহ্বান করেই তিনি গা ঢাকা দেন। তার মনোনীত কিছু ঠিকাদার ও অফিসের কিছু কর্মকর্তার মাধ্যমে ৫% টাকা নিয়ে আইডি বিক্রি করে রেট দিয়ে দেন।
অভিযোগে বলা হয়, সর্বশেষ টেন্ডারে আইডি ৮০৮৮৭৯ থেকে ৮০৮৯৪১ পর্যন্ত ৬২ গ্রুপ কাজ প্রায় ২০ কোটি টাকার কাজে ১ কোটি টাকা ভাগ করে নিয়েছেন ফরিদপুরের আলোচিত রাজনৈতিক ‘গডফাদার’ ও পিডি পংকজ কর্মকার । পিডি অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিজস্ব মনোনীত ঠিকাদারদের মাঝে কাজ বণ্টন করেছেন। তার সঙ্গে জড়িত ফরিদপুরের একজন আলোচিত শ্রমিক নেতা, স্থানীয় একজন বিএনপি নেতাসহ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন রয়েছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিএডিসি সরাসরি প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি কাজের সুবিধার্থে সেচের পানির সুব্যবস্থা করার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। কিন্তু প্রকল্প এরিয়া নির্ধারণে পিডি কৃষকদের থেকে দালালদের মাধ্যমে প্রকল্প পাশের নামে ১০% টাকা উৎকোচ নিয়ে থাকেন; যারা টাকা দেন না তাদের প্রকল্প পাশ হয় না।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বিএডিসির অনেক নতুন লাইসেন্সধারী আছেন যারা বিগত ৫ বছর ধরে লাইসেন্স ফি দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে এলটিএম (লিমিটেড টেন্ডার মেথড) টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন না। এলটিএম করে টেন্ডার করলে লটারি হবে, লটারিতে বিএডিসির তালিকাভুক্ত সব ঠিকাদার অংশগ্রহণ করতে পারবে। লটারিতে কাজ পেলে তো ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেন না পিডি। তাই পিডি সুকৌশলে রেট দিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড) টেন্ডার করেন।
তারা টেন্ডার ওটিএম করলে রেট ওপেন করার দাবি জানান, যাতে যার কাজ নেওয়ার যোগ্যতা আছে তিনি কাজ পেতে পারেন। আর তা না হলে এলটিএম টেন্ডার আহ্বান করার দাবি জানান, যাতে সবাই লটারিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে বেলা ১১টা দিকে শহরের হারোকান্দিতে ফরিদপুর বিএডিসি (সেচ) অফিসের সামনে মানববন্ধন ও ঘেরাও কর্মসূচি করতে গিয়ে তারা বাধার মুখে পড়েন। স্থানীয় একজন পৌর কাউন্সিলের নেতৃত্বে একদল যুবক তাদের বাধা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সাড়ে ১১টার দিকে কর্মসূচির মাইক বহনকারী রিকশা সেখানে গেলে যুবকরা তা ফেরত পাঠিয়ে দেয়। সেখানে একদল লোক গেটের সামনে পাহারা দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকল্প পরিচালক পংকজ কর্মকার বলেন, “যিনি বা যারা এসব অভিযোগ করছেন তারা কেউই বিএডিসির তালিকাভুক্ত ঠিকাদার নন। এ ধরনের অভিযোগ করারই কোনো এক্তিয়ার তাদের নেই।
“আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে টেন্ডার আহবান করি। এই প্রক্রিয়ায় দেশের যেকোনো যায়গা থেকে বাড়িতে বসে যোগ্যতাসম্পন্ন যে কেউ অংশ নিতে পারেন।”
গোপন রেট পছন্দের ঠিকাদারদের জানিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “মনগড়া ও ভিত্তিহীন যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা হাস্যকর।”