চলতি অর্থবছরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৪০০ বিঘা জমিতে এ পেঁয়াজের আবাদ করা হয়।
Published : 23 Jan 2024, 05:00 PM
‘ভাল’ ফলন ও ‘আশানুরূপ’ দামের কারণে যশোরের বেনাপোলের মাটিতে ভারতীয় ‘রেড এন-৫৩’ নাসিক জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
পরীক্ষামূলকভাবে শার্শার মাটিতে প্রথমবারের মত এই পেঁয়াজ চাষে প্রত্যাশার চেয়ে ‘ভাল’ ফলন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ দাবি করেছে।
গত সেপ্টেম্বরে চাষিরা বীজতলা তৈরি করেন। এরপর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করেছেন। এখন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে।
শার্শার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দীপক কুমার সাহা বলেন, রেড এন-৫৩ নাসিক জাতের পেঁয়াজ চাষের উদ্দেশ্য দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানি নির্ভরতা কমানো।
“পরীক্ষামূলকভাবে শার্শায় এ বছরই প্রথম এ পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। এতে প্রত্যাশার চেয়েও ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে। আগামীতে চাষ আরও বাড়বে।”
এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৪০০ বিঘা (৫৩ হেক্টর) জমিতে আবাদ করা হয়েছে গ্রীষ্মকালীন রেড এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ। ৪০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে এই পেঁয়াজের বীজ, সার, পরিচর্যার নগদ অর্থ, বালাইনাশক, পলিথিন, সুতা ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়।
আর শীতকালীন পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে ২৪০ হেক্টর জমিতে। সব মিলিয়ে মোট পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন।
শার্শা উপজেলার রাজনগর গ্রামের কৃষক মুন্না পারভেজ দুই বিঘা জমিতে ভারতীয় পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। ডিসেম্বরের শেষে তিনি জমি থেকে বড় বড় পেঁয়াজ তুলেছেন; যার ওজন ৫৮ মণ (২ হাজার ৩২০ কেজি)।
জমি থেকে আরও পেঁয়াজ উঠবে জানিয়ে মুন্না বলেন, “বিঘাপ্রতি এই পেঁয়াজ চাষে আমার খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। দাম এখনকার অবস্থায় থাকলেও দুই লাখ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হবে, আশা করছি।”
সুবর্ণখালী গ্রামের চাষি কামরুজ্জামান বলেন, “বাজারে পুরানো পেঁয়াজ প্রতিকেজি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আর নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। ভারত থেকে পেঁয়াজ না এলে আমরা আরও ভাল দাম পেতাম।”
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ জমি থেকে ওঠানো শুরু হয়েছে; প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ মণ ফলন হয়েছে বলে লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামের জসিমউদ্দীন জানিয়েছেন।
এ কৃষক বলেন, “লাল রঙের বড় বড় প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম। ফলন ভাল হলেও বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন কম। তাই চাষিদের একটু মন খারাপ। তারপরও লাভের আশা করছি।”
নিজামপুরের চান্দুরিয়ার ঘোপ গ্রামের হারান শেখ বলেন, “'আগে গাছের গোড়ায় বৃষ্টির পানি জমলে পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ বৃষ্টি হলেও পচন ধরে নাই; বরং ফলন আরও ভাল হয়েছে।”
পাট কিংবা আউশ ধান তোলার পর যে জমিটা পড়ে থাকে কৃষি বিভাগের পরামর্শে সেখানেই নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে বাড়তি আয় হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, “আগামী বছরও এই পেঁয়াজ চাষ করব।”
শার্শার সুর্বণখালী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, শীতকালে এই এলাকায় ‘তাহেরপুরী’ নামের একটি জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। আর বর্ষাকালে চাষ হয় বারি-৫ জাতের পেঁয়াজ। কিন্তু এই পেঁয়াজের বীজের খুব সঙ্কট। এ জন্য শার্শায় বর্ষাকালে কোনো পেঁয়াজই চাষ হতো না।
এবারই প্রথম শার্শায় এমনকি যশোরে রেড এন-৫৩ নাসিক জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে জানিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, গত সেপ্টেম্বরে চাষিরা বীজতলা তৈরি করেন। এরপর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করেছেন। এখন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে।
বাজারে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে পেঁয়াজ ‘সংকট’ কমাতে এবং দেশে পেঁয়াজ ‘উৎপাদন বাড়াতে’ ভারতীয় এই পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।