বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে পাওয়া মাছের থেকে জিনগত ভিন্নতা ও আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যমুনা নদীর রুই মাছের।
Published : 29 Feb 2024, 09:56 AM
যমুনা নদীর রুই মাছের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স বা জিন বিন্যাস উন্মোচন করেছেন জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষণা সেলের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাছানের নেতৃত্বে দুই বছরের বেশি সময় ধরে করা গবেষণায় এই সফলতা পাওয়া গেছে। যা রুই মাছের সংরক্ষণ ও উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, বলছেন গবেষকরা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য জানানো হয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুব আলম।
সেমিনারে গবেষক মাহমুদুল হাছান জানান, যমুনা নদী থেকে সংগ্রহ করা রুই মাছ (ল্যাবিও রোহিতা) নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োডায়ভারসিটি ল্যাবসহ জাপান ও ভারতের ল্যাবরেটরিতে সুপার কম্পিউটারে গবেষণা কার্যক্রম চালান তিনি।
২০২২ সাল থেকে দুই বছরের বেশি সময় ধরে কাজের সমন্বয়ে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে রুইয়ের ডিএনএ বা কৌলিক বৈশিষ্ট্যের সব তথ্য জানতে পারেন তারা।
তিনি বলেন, “জিনোম হচ্ছে কোনো জীবের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবের অঙ্গসংস্থান, জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজনন এবং পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াসহ সব জৈবিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এর জিনোমে সংরক্ষিত নির্দেশনা থেকে।
“পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে কোনো জীবের জিনোমে সব নিউক্লিওটাইডসমূহ (জৈবঅনু) কীভাবে বিন্যস্ত রয়েছে তা নিরূপণ করা। একটি জীবের জিনোমে সর্বমোট জিনের সংখ্যা, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের কাজ পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স থেকেই জানা যায়।”
জীবনরহস্য উন্মোচনের এই সফলতা রুই মাছের জাত উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে তা এই মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতেও সহায়ক হবে।
সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করলে উৎপাদন বৃদ্ধি ও মান বাড়িয়ে রুই মাছ বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদনে উদাহরণ সৃষ্টি করবে বলেও আশা করেন এই গবেষক।
সেমিনারে জানানো হয়, গবেষণা ফলাফলে দেখা গেছে বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে পাওয়া মাছের থেকে জিনগত ভিন্নতা ও আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যমুনা নদীর রুই মাছের।
ভবিষ্যতে বায়োমার্কার ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট জিন শনাক্ত করে এই মাছের বৃদ্ধি, রং, রোগ-বালাইয়ের জন্য যেসব জিন দায়ী সেগুলোর উপর কাজ করে রুই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. কামরুল আলম খান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. তোফাজ্জল ইসলাম, রেজিস্ট্রার সৈয়দ ফারুক হোসেন, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির বায়োইনফরমেটিক্স বিভাগের প্রধান মো. উজ্জ্বল হোসেন।
ফিশারিজ বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল বারীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, হলের প্রভোস্ট, ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।