“নাহিয়ানকে হারানো মানে একটা ফ্যামিলির লস না; একটা দেশের লস।“
Published : 01 Mar 2024, 05:58 PM
রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন হারিসকে তার পরিবার আর শিক্ষকরা চিরদিনের মত বিদায় জানিয়েছে চোখের জলে।
২৩ বছর বয়সী নাহিয়ান বরিশাল নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলিটেকনিক রোডের বাসিন্দা রিয়াজুল আমিন বাবুর একমাত্র ছেলে ছিলেন। শুক্রবার বেলা পৌনে ২টার দিকে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বরিশাল জিলা স্কুল থেকে পড়াশুনা করা নাহিয়ানের লাশবাহী গাড়ি প্রথমে স্কুলের পেছনে কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে রাখা হয়। এ সময় স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা শেষবারের মত তার মুখ দেখেন।
আছরের নামাজের পর বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট জামে মসজিদের সামনে নাহিয়ানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে নগরীর মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
সেখানে কথা হয় নাহিয়ানের ফুফাতো ভাই বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নাভিদ নূরের সঙ্গে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে নাভিদ বলেন, “নাহিয়ানকে হারানো মানে আমাদের একটা ফ্যামিলির লস না; একটা দেশের লস। বরিশাল জেলার লস।”
বরিশাল জিলা স্কুলের গত ১০ বছরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সেরা ৮/১০ জনের মধ্যে ওর নামটাও (নাহিয়ান) চলে আসবে জানিয়ে নাভিদ বলেন, “ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাংলাদেশে অনেক বড় সার্ভিস দিতে পারতো।
ওকে বাংলাদেশের গর্ভমেন্টও পেলো না, আমরাও পেলাম না।”
২০২০ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০২২ সালে ঢাকা নটরডেম থেকে এইচএসসি পাশ করার পর বুয়েটে ভর্তি হয় নাহিয়ান। সে বাক প্রতিবন্ধী বাবার একমাত্র ছেলে। তার একমাত্র বোন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী।
রাত দেড়টার দিকে নাহিয়ানের মৃত্যুর খবর পান জানিয়ে নাভিদ বলেন, “ওর শরীরে বার্ন নেই। আমি যেটা শুনেছি, তাতে ধারণা করছি কার্বন মনোক্সাইডের কারণে সে মারা গেছে। যদি ভালো একটা ফায়ার এক্সিট থাকত তাহলে ছেলেটা হয়তো বেঁচে যেত।
“বেইলি রোডে অনেক নামকরা রেস্তোরাঁ আছে। মানুষ সেখানে অনুষ্ঠান করে, অথচ ওখানে জীবনের নিরাপত্তা নেই। এটা তো কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। কোনো হোটেল অনুমোদন দেওয়ার সময় দেখা উচিত, তাদের ফায়ার এক্সিট আছে কিনা।”
বরিশাল জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষকসহ সকলের স্বপ্ন ছিলো, নাহিয়ান তার স্কুলকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করবে।
“তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত নাহিয়ানকে পড়িয়েছি। আমার সন্তানের চেয়েও প্রিয় ছিল সে।”