পরিত্যক্ত ভবনে ডাকঘর, একটু বৃষ্টিতেই ‘হাঁটু পানি’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রাণাধীন ভবনটি প্রায় আট বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2023, 04:03 AM
Updated : 24 Oct 2023, 04:03 AM

গাজীপুরের সাবেক বাসন ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষেই চলছে চান্দনা শাখা ডাকঘরের কার্যক্রম। একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যায় কক্ষে ও বারান্দায়।

এ ছাড়া কক্ষটির দরজা-জানালা ভাঙা; সামনে অটোরিকশা ও লেগুনার স্ট্যান্ড স্থাপন করে যাতায়াতের পথটিও রুদ্ধ করে রাখেন পরিবহনের শ্রমিকরা।

ফলে পোস্ট মাস্টার, রানার, ডাকপিয়ন ও সেবাগ্রহীতাদের প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পোস্ট মাস্টার ফারজানা বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি এখানে যোগদান করার পর থেকেই নানা সমস্যা দেখে আসছেন। ডাকঘরের যে কক্ষটিতে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে সেটির দরজা, তিনটি জানালার দুটিই ভাঙা। নেই শৌচাগার, এমনকি খাবার পানির ব্যবস্থাও।

“একজন নারীর পক্ষে এটা খুবই কষ্টকর। গাজীপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্র চান্দনা-চৌরাস্তা ও আশপাশের এলাকায় বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অফিস, কলকারখানা থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার চিঠিপত্র ও বোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতাসহ গুরুত্বপূর্ণ পার্সেল-ডকুমেন্ট এ অফিসে আসে। কিন্তু অফিস কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙা থাকায় এবং ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ায় নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “অফিস কক্ষের সামনেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও অটোরিকশা-লেগুনার স্ট্যান্ড রয়েছে। এখানকার পরিবহনের শ্রমিকরা ও অনেক পথচারী ময়লার স্তূপে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেন। সারাক্ষণ জানালায় ভারি পর্দা টানিয়ে অফিসে বসে থাকতে হয়। নোংরা ও প্রস্রাবের দুর্গন্ধে বসে থাকায় খুবই কষ্টকর।”

বর্তমানে বাসন ইউপির ওই ভবনটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রাণাধীন থাকলেও প্রায় আট বছর আগে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে সিটি কর্তৃপক্ষ।

করোনা মহামারিকালে কিছুদিন ডাকঘরের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে কক্ষের তালা ভেঙে ফ্যান ও গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি হয়ে যায় বলে জানান পোস্ট মাস্টার ফারজানা।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন বলে জানান তিনি।

আবারও যে কোনো সময় অঘটন ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা তার।

চান্দনা ডাকঘরটি দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তর করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন পোস্ট মাস্টার।

এ ব্যাপারে ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলেও কোনো সুরাহা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “খুবই আতঙ্কের মধ্যে অফিস করছি। যতটুকু সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ কিছু সামগ্রী-উপকরণ নিজের ব্যাগে করে বাসায় নিয়ে যাই। আবার অফিসে আসার পথে নিয়ে যাই। কিন্তু সব কিছুতো আর সরানো সম্ভব নয়।“

ডাকঘরটির রানার মো. মুনসুর আলী জানান, শাখা পোস্ট অফিসের সামনে লেগুনা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড স্থাপন করে  যাতায়াতের রাস্তাটি এক প্রকার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ডাক ব্যাগ এবং পার্সেল নথি আনা-নেওয়া কষ্টকর হয় পড়ে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

একই কথা জানান ডাকপিয়ন তমিজ উদ্দিনও।

তিনি বলেন, “অফিসের সামনের জায়গা উঁচু থাকায় বৃষ্টির পানি গিয়ে পোস্ট অফিসের নিচু বারান্দা ও মেঝেতে গড়ায়। এতে সেখানে পানি জমে গিয়ে ৩/৪ ফুট হয়ে যায়। শেষে মোটর লাগিয়ে পানি সেচে সরিয়ে অফিসে যেতে হয়।”

স্থানীয় বাসিন্দা মো. নজরুল ইসলাম জানান, চান্দনা-চৌরাস্তা গাজীপুর শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে বিভিন্ন অফিস ও কলকারখানা থাকায় লাখ লাখ লোকের বসবাস। তাই এখানে শাখা অফিস বাদ দিয়ে সাব-পোস্ট অফিস স্থাপন করা জরুরি। এতে সবার ভোগান্তি কমবে বলে দাবি তার।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) মো. সুমন মিয়া বলেন, সাব-পোস্ট অফিস স্থাপনের জন্য সরকারি বরাদ্দ হয়। কিন্তু চান্দনারটি শাখা পোস্ট অফিস হওয়ায় এর জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দের সুযোগ নেই। তারপরও এ ডাকঘরটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কেউ যদি একটি কক্ষের ব্যবস্থা করেন তবে দ্রুত তা স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, এলাকাবাসী ঢাকা বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল বরাবর আবেদন জানালে সাব-পোস্ট অফিস স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করতে পারেন।