তবে খোলা রয়েছে সব হাসপাতাল-ক্লিনিকের জরুরি বিভাগ।
Published : 01 Mar 2023, 07:24 PM
খুলনা বিভাগের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে।
নগরীর একটি নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকের ওপর পুলিশের এক এএসআই ও তার সঙ্গীদের মারধরের অভিযোগে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখা এ কর্মসূচির ডাক দেয়।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মবিরতি চলবে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত। তবে খোলা রয়েছে সব হাসপাতাল-ক্লিনিকের জরুরি বিভাগ।
এর আগে মঙ্গলবার বিএমএর খুলনা শাখা এক সংবাদ সম্মেলনের এ কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়।
এদিকে, চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। দূর-দূরান্ত থেকে বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
বুধবার সকাল থেকে নগরীর কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
বিএমএ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি শেখ বাহারুল আলম অভিযোগ করে বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পুলিশের এক এএসআই ও তার সঙ্গীরা শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শেখ নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন। অপারেশন থিয়েটারে ভাঙচুর চালান তারা।
“এক মাস আগে অপারেশন করা রোগীর জটিলতার কথা বলে তারা এ হামলা চালায়। চিকিৎসক নিশাত বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”
বিএমএ খুলনা জেলা শাখার সভাপতি বাহারুল বলেন, এ ঘটনায় চিকিৎসক নিশাত বাদী হয়ে মঙ্গলবার নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি।
তবে যাদের বিরুদ্ধে চিকিৎসক নিশাতকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে, তারা বলছেন ভিন্ন কথা।
বুধবার দুপুরে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন।
সাতক্ষীরার একটি থানায় কর্মরত ওই এসআইয়ের পরিবার খুলনা নগরীতে বসবাস করে।
দুপুরের দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ওই এএসআইয়ের স্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, কিছু দিন আগে তার আগুনে পোড়া মেয়েকে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করেন। সেখান সে সুস্থ হলেও তার বাম হাতের কয়েকটি আঙুল জোড়া লেগে যাওয়ায় শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহকে দেখানো হয়। তার পরামর্শেই শিশুকে ভর্তি করানো হয় নগরীর হক নার্সিং হোমে।
সেখানে চিকিৎসক তাকে কু-প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ করেন ওই নারী। তিনি বলেন, “ওই হাসপাতালে আমার মেয়ের অপারেশন হয়। চিকিৎসকের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার ছয় বছরের মেয়ের বাম হাতের একটি আঙুল হারিয়েছি।”
এরপর কয়েক দফায় তাকে একা ওই চিকিৎসকের চেম্বারে ডাকা হলেও না গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি স্বামীকে বিষয়টি জানান।
এই নারী সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মেয়ের হাতের একটি আঙুলে সমস্যা দেখা দেওয়ায় শিশুকে নিয়ে হক নার্সিং হোমে যান তিনি। পরে শিশুটির বাবাও যান। সেখানে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হলে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ আনেন এএসআই। পরে পুলিশের উপস্থিতিতেই ঘটনাটি সেখানেই মীমাংসা হয়।
তিনি আরও বলেন, “অপারেশন করে ছেড়ে দেওয়া হলেও আমাকে প্রায়ই হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস দিতেন চিকিৎসক নিশাত। যেখানে আমার মেয়ের অঙ্গহাানর জন্য আমরা মামলা করব, সেখানে উল্টো আমাদেরই আজ ভিকটিম হতে হচ্ছে। আমাদের ওপর হামলা করে ডা. নিশাত এখন নিজেকে বাঁচাতে নতুন নাটক শুরু করেছেন।”
এ ব্যাপারে চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
শিশুটির মায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএমএ খুলনা শাখার সভাপতি শেখ বাহারুল আলম বলেন, “এটা আমি সংবাদিকদের মাধ্যমে শুনেছি। নিশাতের নৈতিক স্খলনের জন্য বিএমএ দায়ী নয়। আমরা শুধু চিকিৎসকের ওপর হামলা হয়েছে সে বিষয়ে আন্দোলন করছি।”
দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর ওই নারী [এএসআইয়ের স্ত্রী] খুলনা প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সেখানেও তিনি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি সন্তানের চিকিৎসায় অবহেলা এবং তার হাতের আঙুলে পচন ধরার অভিযোগ আনেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় গিয়ে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে মামলা করেন।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “একজন এএসআইয়ের স্ত্রী বাদী হয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ এবং মেয়ের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছেন।”
মামলায় আসামি হিসেবে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহ এবং হক নার্সিং হোমের চিকিৎসক নুরুল হক ফকিরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে পুলিশের এএসআইয়ের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনের নামে বিরুদ্ধে হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগে মামলা করেছেন বলে জানান ওসি।