ডুমাইন ঘাটের ড্রেজার মেশিনের চালক জানালেন, দিনে ৮-১০ হাজার ফুট বালু তোলা যায়।
Published : 01 Mar 2023, 11:51 AM
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের গড়াই নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে লুট করা হচ্ছে বালু। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে নদী পাড়ের মানুষগুলো রয়েছে ভাঙনের হুমকিতে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, গত দুই মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বালু উত্তোলনের প্রভাবে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন বাড়বে নদীতে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়নি বলে অভিযোগ করেন নদী পাড়ের মানুষরা।
স্থানীয় বাসিন্দা সোনিয়া পারভীন, রেহেলা বেগমসহ বেশ কয়েকজন বলেন, তারা গরিব মানুষ। ভিটা ছাড়া তাদের কোনো জমিজমা নেই, যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে তাতে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন বাড়বে। তখন ভিটেমাটি হারিয়ে তাদের নিঃস্ব হতে হবে।
তারা সরকার ও প্রশাসনের কাছে বালু উত্তোলন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডুমাইন ইউনিয়নের ডুমাইন ঘাট ও নিসচিন্তপুর এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলার কাজ চলছে। সেখানে মাঝ নদীতে বসানো ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বালু তোলা হচ্ছে।
ডুমাইন ঘাটের ড্রেজার মেশিনের চালক জানালেন, দিনে ৮-১০ হাজার ফুট বালু তোলা যায়। তবে মাঝে মধ্যে লোক জন আসে, সেজন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়।
স্থানীদের অভিযোগ, এই বালু উত্তোলন চলছে ডুমানই ইউপির চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান তপনের নেতৃত্বে।
এই বিষয়ে শাহ আসাদুজ্জামান তপন বলেন, “নদী ভাঙনের ফলে আমাদের ইউনিয়নের জমি পাশ্ববর্তী মাগুরা জেলার সীমায় চলে গেছে। ওই এলাকার মানুষগুলো সেখানে ফসল ফলিয়ে নিয়ে যায়, আমরা কিছু করতে পারি না। তাই চেষ্টা করছি কিছু বালু তোলার।
“এ ছাড়াও এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে, সেখানে বালুর প্রয়োজন। আমরা সেখানে বালু সরবরাহ করছি। তবে মাঝে মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হলে মেশিন বন্ধ রাখা হয়।”
এদিকে মধুমতি-গড়াই নদীতে জেগে ওঠা চরের জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হলেও এই জমিতে সাধারণত লাগোয়া জমির কৃষকেরাই বিভিন্ন ফসল আবাদ করে থাকেন।
কিন্তু এখন ইটভাটার লোকজন অবাধে মাটি কেটে নেওয়ায় তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের রায়জাদাপুরের নদী তীরের কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, ভাটার মালিকেরা অর্থবিত্তের মালিক ও প্রভাবশালী। তাদের কেউ কিছু বলার সাহস রাখে না। এভাবে মাটি কেটে নেয়ায় আশেপাশের ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেখানে নদী তীরে ভাঙ্গনের আশঙ্কাও রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, নদীতীরে গড়ে ওঠা এমএনজেড ব্রিকস নামে একটি ইটভাটার লোকেরা রায়জাদাপুরের খেয়াঘাট এলাকার নদী পাড়ের জমি থেকে প্রতিরাতে বেকু দিয়ে কেটে ট্রাক ভরে লাখ লাখ টাকার মাটি নিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে এমএনজেড ব্রিকসের মালিকদের একজন মিলন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের ইট ভাটায় সব মাটি বাইরে থেকে আনা। নদীর কোনো মাটি নেই।
তাহলে রাতের বেলায় বেকু দিয়ে মাটি কাটেন কেনো? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, নদীর পাড়ের ব্যক্তি মালিকানা জমি থেকে তারা মাটি কাটছেন।
তবে সেসব জমি থেকেও মাটি কাটার কোনো অনুমতি তাদের নেই বলে স্বীকার করেন তিনি।
মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিকুর রহমান চৌধুরী এই ব্যাপারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিন মাটি কাটা বা বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মাটি কাটার অভিযোগে এমএনজেড ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়েছিল।”
আবারও মাটি কাটা বা বালু উত্তোলন করা হলে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।