সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে দরজা খুলে দিলে হারুনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সি মেম্বারকে দেখে অবাক হন মেহরাজ।
Published : 07 Feb 2024, 03:14 PM
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণ করতেই আওয়ামী লীগ নেতা চুরির ঘটনা সাজান বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সি বিভিন্ন সময় ওই নারীকে উত্ত্যক্ত করতেন।
“ধর্ষণের উদ্দেশ্যেই সোমবার রাতে তার জমির বর্গাচাষি মো. মেহরাজকে (৪৮) দিয়ে সিঁধ কাটিয়ে ওই গৃহবধূর বসতঘরে প্রবেশ করেন তিনি।”
পুলিশ সুপার জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মো. মেহরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ঘটনার সময় আবুল খায়ের মুন্সির পরনে থাকা কালো প্যান্ট, কালো কানটুপি, সিঁধ কাটার কাজে ব্যবহৃত কোদাল, কাঁচি জব্দ করে পুলিশ।
“এরপর মেহরাজ ও এ মামলার প্রধান আসামি আবুল খায়ের মুন্সিকে মুখোমুখি করা হলে তারা পুলিশের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন।”
পুলিশ সুপার বলেন, মূলত গরুর ব্যাপারী মো. হারুনের (৪২) মাধ্যমে গৃহবধূর বসতঘরে মালামাল আছে বলে মেহরাজকে চুরি করতে উদ্বুদ্ধ করেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের মুন্সি।
“মেহরাজ সোমবার রাত ২টার দিকে সিঁধ কেটে গৃহবধূর ঘরে প্রবেশ করেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের দরজা খুলে দিলে হারুনের সঙ্গে মুন্সি মেম্বারকে দেখে মেহরাজ অবাক হন এবং বুঝতে পারেন ধর্ষণ করতেই তাকে দিয়ে চুরির ঘটনাটি সাজিয়েছেন মুন্সি মেম্বার।
আসাদুজ্জামান বলেন, এরপর আবুল খায়ের ও হারুন ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন। এ সময় পাশের রুমে থাকা ওই নারীর পঞ্চম শ্রণি পড়ুয়া ১২ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করেন মেহরাজ। এবং ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
ধর্ষণ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় কানে থাকা স্বর্ণের দুল, দুটি নাকফুল ও ঘরে থাকা ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যান তারা।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে আবুল খায়ের মুন্সি ও মো. হারুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে চরজব্বর থানা মামলা দায়ের করেন।
পরে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহরের মাইজদী এলাকা থেকে আবুল খায়েরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর রাতে চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মেহরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেহেরাজ একই এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে হাতিয়া থেকে এসে চরকাজী মোখলেছ গ্রামে নতুন বাড়ি করেন ওই নারীর স্বামী। বাড়িতে তিনি স্ত্রী ও তিন মেয়েসহ বসবাস করতেন।
দিনমজুরির কাজ করা ওই ব্যক্তি মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গেলে ২-৩ দিন বাড়ির বাইরে থাকতেন। ঘটনার সময়ও কাজের সন্ধানে তিনি বাড়ির বাইরে ছিলেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আরও বলেন, “আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। সেখানে রিমান্ড প্রার্থনা করে তথ্য যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাকি আসামি হারুনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। সেজন্য পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।”
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) নিত্যানন্দ দাস, চরজব্বার থানা পুলিশের ওসি রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: