“মেয়েদের ক্ষেত্রে সমাজে একটা নীরব অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। মেয়েরা এক সময় সেভাবে পড়াশোনায় আসত না। এখন পরিবার চাচ্ছে তাদের মেয়েরা পড়ুক,” বলেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
Published : 12 May 2024, 10:43 PM
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশের মত চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডেও ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা; গত ৭ বছর ধরেই এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে তাদের।
চট্টগ্রামে এবার মাধ্যমিকে পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে মেয়েদের পাসের হার ৮৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এগিয়ে মেয়েরা। এবার চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ পাওয়া ১০ হাজার ৮২৩ জনের মধ্যে মেয়ে ৫ হাজার ৭৫০ জন, আর ছেলে ৫ হাজার ৭৩ জন।
মাধ্যমিকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের গত ১২ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। মাঝে ২০১৯ ও ২০২০ সালে ছাত্ররা পাসের কিছুটা এগিয়ে গেলেও পরবর্তী বছরগুলোতে ফের সাফল্য ধরে রাখে ছাত্রীরা। পরীক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণও বাড়ছে প্রতিবছর।
ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য সামাজিক বিষয়গুলোকে কারণ বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মেয়েদের ক্ষেত্রে সমাজে একটা নীরব অভ্যুত্থান ঘটে গেছে। মেয়েরা এক সময় সেভাবে পড়াশোনায় আসত না। এখন পরিবার চাচ্ছে তাদের মেয়েরা পড়ুক। যেটা বড় ধরনের সামাজিক বিপ্লব।”
২০২৩ সালে ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৭১ শতাংশ; ছাত্র পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। একইভাবে জিপিএ-৫ পাওয়া ১১ হাজার ৪৫০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মেয়ে ৬ হাজার ৪৪৬ জন এবং ছেলে ৫ হাজার ৪ জন ছিলেন।
২০২২ সালে চট্টগ্রাম বোর্ডে ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ; ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও ছাত্র পাসের হার ছিল ৯০ দশমিক ১৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তখন এগিয়ে থাকে ছাত্রীরা।
মাঝে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিন বছরে চট্টগ্রাম বোর্ডে ছেলেদের পাসের হার বেশি হলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে ছিল মেয়েরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে গণভবনে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্র সংখ্যা কমে যাওয়ার এবং পাসের হারে টানা ছাত্রদের পিছিয়ে থাকার কারণ খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারণটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, ছাত্র সংখ্যা কেন কম। কী কারণে ছাত্র কমে যাচ্ছে। পাসের হারের ক্ষেত্রেও অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে। সেটা খুব ভালো কথা। কিন্তু তারপরও আমি বলব, এ বিষয়টায় আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।”
কোভিড মহামারীর শুরুর বছর ২০২০ সালে চট্টগ্রামে মাধ্যমিকে পাসের হারে সামান্য এগিয়ে যায় ছেলেরা। ওই বছর পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক শতাংশ।
সে বছর চট্টগ্রামে মোট জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৮ জন। এর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৭৬৩ জন, আর ছেলেদের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৪৫ জন।
২০১৯ সালে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলেরা ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং মেয়েরা পাস করে ৭৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সে বছর জিপিএ-৫ পাওয়া মোট ৭ হাজার ৩৯৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ছিলেন ৩ হাজার ৭৪১ জন। অপরদিকে ছাত্র ছিলেন ৩ হাজার ৬৫২ জন।
২০১৮ সালে ছেলেদের পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ, মেয়েদের ছিল ৭৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। সে বছর ৮ হাজার ৯৪ জন জিপিএ-৫ পান। তার মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৭২ জন, আর ছাত্র সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৯২২ জন।
১২ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত ২০১৭ সাল থেকেই চট্টগ্রাম বোর্ডে এগিয়ে যেতে শুরু করে ছাত্রীরা।
২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বোর্ডে পাশের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যার মধ্যে ছাত্রী ৮৪ শতাংশ, আর ছাত্রদের পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বোর্ডে সার্বিক ফলাফলে এগিয়ে ছিল ছাত্ররা।
২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রদের পাসের যথাক্রমে পাশের হার ছিল ৮৯ দশমিক ১৪, ৯২ দশমিক ৩৩, ৮৪ দশমিক ৬০ ও ৯০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। বিপরীতে ছাত্রীদের পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ১০, ৯০ দশমিক ৫৮, ৮১ দশমিক ১১, ৮৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
গত ১২ বছরের ফলাফলে বিশ্লেষণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি অংশগ্রহণ দেখা যায়।
ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ কী, এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, “পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মেয়েদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তারা সেটা মেনে চলে। এক্ষেত্রে ছেলেরা একটু ‘বেপোরোয়া’, পরিবার ও প্রতিষ্ঠান তাদের বাধ্যবাধকতায় আনতে পারছে না।
“ব্যাপকভাবে না হলেও ছেলেদের অনেকে ‘কিশোর গ্যাংসহ’ নানা জায়গায় জড়িয়ে পড়ছে। ফেসবুকে আসক্ত হচ্ছে, যেটা মেয়েদের ক্ষেত্রে কম।”
বিষয়টি নিয়ে পরিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।