মানিকগঞ্জে এবার ৫৭১টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
Published : 19 Oct 2023, 12:33 PM
রং-তুলির শেষ আঁচড়ে, বর্ণিল পোশাক আর মূল্যবান গহনায় পরিপূর্ণভাবে সেজে উঠেছে দুর্গা প্রতিমা। সাজিয়ে তোলা হয়েছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীর প্রতিমাকেও। সব প্রস্তুতি সেরে ক্ষণ গুণছেন মানিকগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। কারণ রাত পোহালেই শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎবের।
শুক্রবার শুরু হয়ে আগামী মঙ্গলবার এই ধর্মীয় উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে বলে জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনির্বাণ পাল। এবার জেলার ৫৭১টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা হতে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে জেলার মণ্ডপগুলো ঘুরে দেখা গেছে, দেবী প্রতিমায় শিল্পীদের তুলির শেষ আঁচড় এবং বস্ত্র পরিধানের পর অপরূপা সাজে সজ্জিত দেবীকে বরণ করে নিতে শেষ মুহূর্তের অন্যান্য প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পুণ্যার্থীরা।
হরিরামপুর উপজেলার যাত্রাপুর কর্মকার পাড়া সার্বজনীন মণ্ডপে দেখা যায়, প্রতিমার বস্ত্র পরিধানের পর শেষমুহূর্তের টুকিটাকি কাজ সারছেন প্রতিমাশিল্পী পলাশ পাল।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বাবা গোপাল পাল, আমার দাদা গোকুল পাল ও আমি এবার দু’টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করছি। প্রায় ১ মাস ধরে কাজ করে সব শেষ করেছি।”
বলড়া ইউনিয়নের বলড়া গ্রামের সাহা বাড়ির মণ্ডপে কাজ করা কন্টা রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একমাস ধরে প্রতিমার কাজ করে মঙ্গলবার রঙের কাজ শেষ করেছি আর বস্ত্র পরিধান করিয়েছি বুধবার।”
হরিরামপুর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি পিয়াস চৌধুরী বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক পূজা মণ্ডপের সদস্যদের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপরও থেমে নেই আয়োজন। রকমারি আলোকসজ্জায় সজ্জিত হচ্ছে পূজা মণ্ডপ এবং নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে ব্যবস্থা করা হবে সিসি ক্যামেরার। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তাও দেয়া হয়েছে মণ্ডপগুলোতে।
তিনি জানান, এ বছর হরিরামপুর উপজেলায় ৬৮টি মণ্ডপে পূজা হওয়ার কথা ছিল। তবে তিনটি মণ্ডপ পূজা করবে না বলে জানিয়েছে। তাই এ বছর ৬৫টি মণ্ডপে পূজা হবে।
হরিরামপুর থানার ওসি সুমন কুমার আদিত্য বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব সুন্দর ও নির্বিঘ্ন করতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
ঘিওর উপজেলার মৃৎশিল্পী অজিত পাল ও সুধীর পাল জানান, মানুষ আগের মতো মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার না করায় তাদের বছরের বেশিরভাগ সময় বসে কাটাতে হয়। দুর্গা প্রতিমা তৈরির অর্জিত উপার্জন দিয়েই সারাবছর কোনোরকমে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এ বছর প্রতিমা তৈরির প্রতিটি উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধি পায়নি তাদের মজুরি।
ঘিওর উপজেলার ধূলন্ডি গ্রামের সর্বজনীন দুর্গা মন্দির ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার বসু বলেন, “এ বছর দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন ঘোড়ায় চড়ে এবং গমন করবেন নৌকায়। দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, বিনাশ হবে অশুভ শক্তি।”
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের মদন মোহন বিগ্রহ মণ্ডপের কর্ণধার আনন্দ সাহা বলেন, "৭০-৮০ বছর ধরে পূজা হয় এ মণ্ডপে। আমাদের পূজায় খরচ হয় চার লাখ-পাঁচ লাখ টাকা।
“এবার কার্তিক পাল নামের মৃৎশিল্পীর নেতৃত্বে চার জন মৃৎশিল্পী ২৫ দিন ধরে প্রতিমা তৈরিতে কাজ করেছেন। মঙ্গলবার বস্ত্র পরিধানসহ যাবতীয় কাজ শেষ করেছেন তারা।”
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনির্বাণ পাল জানান, এ বছর জেলা শহরসহ মানিকগঞ্জে মোট ৫৭১টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা উদ্যাপন করা হবে। এর মধ্যে মানিকগঞ্জ পৌরসভায় ৩৪, সদর উপজেলায় ৯৬, ঘিওরে ৮২, দৌলতপুরে ৫৩, শিবালয়ে ৯২, হরিরামপুরে ৬৫, সিংগাইর পৌরসভায় ১৩, সিংগাইরে ৫৭ এবং সাটুরিয়ায় ৭৯টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এর মধ্যেই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে এ বিষয়ে মতবিনিময় হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলা পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য তিন স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বী সংগঠনের সাথে শারদীয় দুর্গোৎসব নিয়ে সভা করা হয়েছে। সরকার নির্দেশিত যে নির্দেশনাগুলো রয়েছে সে সম্পর্কে তাদের অবহিত করা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যে নির্দেশনাগুলো দেয়া হয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।