ভোটারদের দুয়ারে ঈদ উপহার পৌঁছে গেছে ঈদে। নাগরিক সমাজের একজন সদস্য এসব উপহারকে ‘মৌসুমি ভালোবাসা’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “এ উপহারের বিনিময়ে ভোট পাওয়ার প্রত্যাশা স্পষ্ট।“
Published : 23 Apr 2023, 11:40 PM
ভোটের তফসিল ঘোষণার পরপর ঈদটা বেশ ভালো কেটেছে খুলনা সিটি করপোরেশনের এলাকার স্বল্প আয়ের মানুষদের। হাত পাততে হয়নি, তার আগেই ‘ঈদ উপহার’ চলে এসেছে ঘরে।
উপহারের মধ্যে ছিল কাপড় আর রান্নার উপকরণ। যারা বিতরণ করেছেন, তাদের সবাই কাউন্সিলর প্রার্থী। তারা বলেছেন, ‘মানুষকে ভালোবেসে উপহার দিয়েছেন। আর নাগরিক সমাজের একজন সদস্য একে বলেছেন, ‘মৌসুমী ভালোবাসা’।
ঈদের মাঠে ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়েও অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করেছেন সম্ভাব্য এই প্রার্থীরা।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জেড এ মাহমুদ ডন জানান, প্রায় চার হাজার মানুষের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে শাড়ি ও লুঙ্গি এবং প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে এক হাজার টাকা মূল্যমানের ঈদসামগ্রী সেমাই, চিনি বিতরণ করেছেন তিনি।
ডন বর্তমানে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ওই ওয়ার্ড থেকে বেশ কয়েকবার ভোট করলেও এবার তিনি লড়তে চাইছেন ২৪ নং ওয়ার্ড থেকে। উপহারের বেশিরভাগই বিতরণ করেছেন সেখানেই।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ডন বলেন, “নতুন এলাকায় নির্বাচন করতে যাচ্ছি। তবে এখানে নির্বাচনের কোনো বিষয় জড়িত নেই। মানুষকে ভালোবেসে উপহার বিতরণ করেছি।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর শমসের আলী মিন্টু জানান, তিনি ২ হাজার পরিবারের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি ও ঈদসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
এর সঙ্গে ভোটের সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, “গত ১০ বছর ধরে ঈদের আগে আমি ঈদ উপহার বিতরণ করে আসছি। মানুষের ভালোবাসায় উপহার বিতরণ করি, ভোট আমাকে সবাই ভালবেসেই দেবে।”
২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা আলী আকবর টিপু চার হাজার, ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করেছেন।
খুলনা সিটি করপোরেশনে ৩১টি ওয়ার্ড রয়েছে। এছাড়া ১০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে। এই ৪১টি পদের বিপরীতে প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রতিটি ওয়ার্ডেই বর্তমান কাউন্সিলর ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা এভাবে ভোটারদের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করছেন।
ভোটের আগে প্রার্থীদের এভাবে উপহার বিতরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি কুদরত-ই-খুদা। তার মতে এগুলো ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মৌসুমী ভালোবাসা’।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এ উপহারের বিনিময়ে ভোট পাওয়ার প্রত্যাশা স্পষ্ট। ভোটের আগে প্রার্থীদের ‘দেশপ্রেম’, ‘মানবপ্রেম’ বেড়ে যায়। পরে আবার তারা এগুলো ভুলে যান।”
কাউন্সিলর পদে ভোটের প্রস্তুতিতে বিএনপিপন্থিরাও
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, ৩১টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সবগুলোতেই বিএনপির দু-চারজন করে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন।
অনেকে গত এক থেকে দেড় বছর ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে আসছেন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় তারা বিপাকে পড়েছেন। দলের পদ হারানোর ভয়ে তাদের অনেকে প্রার্থী নাও হতে পারেন। এলাকায় যাদের অবস্থান ভালো, তাদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
১৯ নম্বর ওয়ার্ডে টানা তিনবারের কাউন্সিলর এবং নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশফাকুর রহমান কাকন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তিনবারের কাউন্সিলর। এলাকার লোকজন আবারও আমাকে নির্বাচন করতে বলছে। সে কারণে বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হব।”
একই বক্তব্য ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে পরপর দুই বারের কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান মনির, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শমশের আলী মিন্টু এবং সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদা খাতুনের।
ভোট করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আছে জানিয়ে তারা সবাই বলেছেন, দল নির্বাচনে না এলেও তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন।
এখন পর্যন্ত মেয়র পদে বিএনপির কেউ ভোটের প্রস্তুতি স্পষ্ট করেননি। তবে গতবারের পরাজিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তিনি মনে করেন আওয়ামী লীগকে ‘খালি মাঠে গোল দেওয়ার’ সুযোগ করে দেওয়া উচিত নয়।
তবে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না। তাই কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেওয়া হবে না। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের তারিখ জানিয়ে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন খুলনা সিটিতে ভোট হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে।