ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাধা

এর আগেও একবার উদ্যোগ নিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা যায়নি।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2022, 02:35 PM
Updated : 1 Oct 2022, 02:35 PM

জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে শহর শাখার সীমানা প্রাচীরের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শনিবার সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকরা ওই কলেজ মাঠের সীমানা প্রাচীরের কাজ করার সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেটি বন্ধের নির্দেশ আসে। তারপরই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। একটি বড় ফটক ও দুই পাশে দুটি ছোট ফটক করারও কথা ছিল।

২০২১ সালের মার্চ মাসেও একবার এই প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তখনও জেলা প্রশাসন এতে বাধা দেয়। ফলে তখন কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, “সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন মাঠটি জেলা প্রশাসনের সম্পত্তি। আরএস ও এসএ অনুযায়ী এটি জেলা প্রশাসনের। কিন্তু বিএস রেকর্ডে এটি শিক্ষা বিভাগের নামে রেকর্ড হয়।

“রেকর্ড সংশোধনের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলার প্রথম জজ আদালতে ২০২১ সাল থেকে মামলা চলমান। ওই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সীমানা প্রাচীর করা দৃষ্টিকটু বিধায় সেটি করতে বাধা দেওয়া হয়েছে।”

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা বলেন, “কাজ শুরু করেছিল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর; তারাই বন্ধ করেছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে মৌখিকভাবে কাজ বন্ধ করতে হচ্ছে বলে জানান।”

ফরিদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, “সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শহর শাখার সামনে ফরিদ শাহ সড়ক সংলগ্ন একটি সীমানা প্রাচীর আগে ছিল। ওই জায়গাতেই নতুন আরেকটি সীমানা প্রাচীর অনুমোদন হয়ে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। প্রাচীরের নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বৃহস্পতিবার থেকে।”

“শনিবার শ্রমিকরা কাজ করতে গেলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, ওই জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে, এ জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হবে।”

প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান বলেন, “যে জায়গায় আগে থেকে সীমানা প্রাচীর ছিল এবং যার পাশে ফরিদপুর পৌরসভার সড়ক সে জায়গা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কী বিরোধ থাকতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়।”

এ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদার মোহাম্মদ মিঠু। তিনি জানান, নয় জন শ্রমিক এ কাজটি করছিলেন। বর্তমানে গর্ত খোড়ার কাজ চলছে। এরই মধ্যে ২৭টি গর্ত খোড়া হয়েছে।

ঠিকাদার বলেন, “শনিবার সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকরা কাজ শুরু করে। কিন্তু সকাল ১০টার দিকে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এদিকে নির্মাণ সামগ্রীর দামও চড়া। আমাকে ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়তে হয়েছে।”

এদিকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে বড় এই মাঠটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ফরিদপুরের সচেতন নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ।

ফরিদপুরের পরিবেশবাদী কাজী শামসুজ্জামান লিটন বলেন, “যে মাঠটিকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেখানে শহরের মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করে, সকালে মুক্ত জায়গায় ব্যায়াম করে, সীমানা প্রাচীর হলে মানুষের শরীরচর্চার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে।”

একই কথা বলেছেন কলেজ শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, “ওই জায়গাটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা দরকার, কারণ শহরে বিনোদনের কোনো জায়গা নেই। পরিবারের শিশু-কিশোরদের নিয়ে বসার মত কোনো ভালো পরিবেশ নেই। তাই ওই জায়গাটুকুতে সবাই আসে, যদি প্রাচীন দেওয়া হয় তাহলে সেটি বাধার মুখে পড়বে।”

রাজেন্দ্র কলেজের দুইটি ক্যাম্পাস আছে। একটি শহরতলীর বায়তুল আমান, যেখানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ক্লাস হয়। অন্যটি শহরের প্রাণকেন্দ্র ঝিলটুলিতে, যেখানে স্নাতক (পাস) শ্রেণির ক্লাস হয়।