গোপালগঞ্জে ‘বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারির’ যাত্রা শুরু

গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2022, 05:52 PM
Updated : 8 August 2022, 05:52 PM

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গোপালগঞ্জে ‘বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারি’ যাত্রা শুরু করেছে।

সোমবার ছিল বঙ্গমাতার ৯২তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ‘মহীয়সী বঙ্গমাতার চেতনায় অদম্য বাংলাদেশের প্রেরণা’ প্রতিপাদ্যে গোপালগঞ্জে গ্যালারির উদ্বোধন করা হয়।

সোমবার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসাপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চত্বরে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ফটো গ্যালারির উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাসপাতালের পরিচালক ও ফটো গ্যালারির উদ্যোক্তা অধ্যাপক ডা. নাহিদ ফেরদৌসী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বক্তব্য দেন।

গ্যালারিতে বঙ্গবন্ধুর আজীবন সহযাত্রী বঙ্গমাতার অনেক অজানা অধ্যায় প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে স্থির চিত্রে তার জীবন, কর্ম, সাহস ও ত্যাগের ইতিহাস ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রদর্শন করা হয়েছে বঙ্গমাতার দুর্লভ সব ছবি।

গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠি ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনার চিত্র। এখানে এসে দর্শণার্থীরা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অজানা অধ্যায়কে জানতে পারছেন।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের গৃহবধূ পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী নার্গিস সুলতানা।

সময় কাটাতে এক ফাঁকে তিনি সদ্য যাত্রা করা ফটো গ্যালারিটি ঘুরে দেখেন।

অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী হলেও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে আমরা গৃহিণী বলেই জানতাম। কিন্তু আজ এখানে ডাক্তার দেখাতে এসে বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারি দেখে আমার ধারণা বদলে গেছে।

“তিনি তো সরাসরি রাজনীতি করেননি। কিন্তু তার মধ্যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুকে পেছন থেকে রাজনীতিতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হতে সহযোগিতা করেছেন। তার এই অসামান্য অবদান আমরা ফটো গ্যালারির ছবি, বিভিন্ন ধরনের ধারা বর্ণনা ও শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠি পড়ে জানতে পেরেছি।”

গোপালগঞ্জ শহরের শেখ হাসিনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন। বঙ্গমাতার জন্মদিনে তারই নামে চালু হওয়া ফটো গ্যালারি দেখতে এসেছে সে।

বঙ্গমাতা সম্পর্কে তার তেমন কোনো জানাশোনা ছিল না। এখানে এসে সে অনেক কিছু জানতে পেরেছে।

তার ভাষায়, “আমি চক্ষু হাসপাতালের বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারি থেকে তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। তিনি ৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণআন্দোলন ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ, প্রেরণা দিয়েছেন। গণ আন্দোলন সংগঠিত করতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাই এই মহিয়সী নারীর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেছে।”

শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অবদান পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায় স্কুলছাত্রী হালিমা।

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম সৈকত বলেন, “চক্ষু হাসপাতালের বঙ্গমাতা ফটো গ্যালারি আমাদের কাছে বঙ্গমাতা সম্পর্কে অজানা অনেক নতুন নতুন তথ্য উপস্থাপন করেছে। এখান থেকে আমরা বঙ্গমাতার অদম্য সাহস, বঙ্গবন্ধুর মামলা পরিচালনা করা, ছেলে-মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সমাজিক দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব কর্তব্য পরায়ণতা সম্পর্কে জানতে পেরেছি।”

গ্যালারির উদ্যোক্তা ও হাসপাতালের পরিচালক নাহিদ ফেরদৌসী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়ের নামে করা হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসাপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। বঙ্গমাতা সারাজীবন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছেন।

“তার এই অসামান্য অবদান আমরা ফটো গ্যালারির মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।”

তিনি জানান, এই হাসপাতালে দেশের অন্তত ৩৫টি জেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তারা এখানে এসে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বঙ্গমাতা ফটো গ্যালালিতে সময় কাটাতে পারবেন। জানবেন বঙ্গমাতা সম্পর্কে নতুন নতুন অধ্যায়।

এ ছাড়া নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গমাতার অজানা তথ্য ও কর্মকে তুলে ধরতে এ প্রয়াস জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি মাত্র যাত্রা শুরু করেছে। আমরা এই ফটো গ্যালালিকে আরো আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলব।”