কুড়িগ্রামে চার পরিবারের মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর

হিন্দু জনগোষ্ঠীর মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর করেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2023, 04:32 PM
Updated : 2 May 2023, 04:32 PM

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় চারটি পরিবারের মন্দিরে হামলা চালিয়ে আটটি প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।

মঙ্গলবার ভোর রাতে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমণ্ডল সীমান্তের রায়পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে ফুলবাড়ী থানার ওসি ফজলুর রহমান জানান।

খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন, বিজিবি সদস্য ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।

স্থানীয়দের বরাতে ওসি ফজলুর রহমান জানান, সীমান্ত এলাকায় রায়পাড়া গ্রামের ভবেশ চন্দ্র বর্মণের বাড়ির হরিদেব মন্দির, বিনয় চন্দ্র বর্মনের মনসা মন্দির, থীরেন চন্দ্র বর্মণের মহাদেব মন্দির এবং বীরেন চন্দ্র বর্মনের বাড়ির রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে ভাংচুর চালায় দুর্বৃত্তরা।

“এতে ভবেশ চন্দ্রের মন্দিরের মহাদেব ঠাকুরের নাক-মুখে ক্ষত ও তিনটি হাতে ফাটল এবং হরি ঠাকুরের নাক-মুখে ক্ষত ও দুটি হাতে ফাটল ধরেছে।

“এছাড়া বিনয় চন্দ্র বর্মণের মনসা ঠাকুরের মাথার মুকুট, মহাদেব ঠাকুরের ডান হাতের দুই আঙুল ও বাম হাতের বৃদ্ধাঙুল ভেঙে ফেলা হয়েছে।”

ওসি আরও জানান, বীরেন্দ্রনাথ বর্মণের পারিবারিক মন্দিরে রাধাকৃঞ্চ ঠাকুরের বাম হাতের কব্জি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ধীরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্দিরে সিমেন্টের তৈরি মহাদেব ঠাকুরের নাক ও পেটে ক্ষত করা হয়েছে।

বীরেন চন্দ্র বর্মন বলেন, “বাড়ির উঠানে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে গ্রামের মানুষ তিন যুগ ধরে পূজা-অর্চনা করে আসছেন। সোমবার সন্ধ্যায়ও সকলে মন্দিরে প্রার্থনা করেছি।

“আজ সকালে মন্দিরে পূজা দিতে গিয়ে দেখি প্রতিমাগুলো ভাংচুর অবস্থায় পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে ভোর রাতে অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তরা এসব ভাংচুর করেছে।”

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অনিল চন্দ্র রায় জানান, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সংঘবদ্ধ চক্রটি মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা অবশ্যই সরকার বিরোধী।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ইউএনও সুমন দাস বলেন, “স্থানীয় হিন্দুদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরকারী দুর্বৃত্তদের অবশ্যই চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।”

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও সুমন দাস।