পড়াশোনার খরচ জোগাতে রিকশাও চালাতে হয়েছে প্রভাষক মমিনুরকে

“অর্নাস পড়ার সময় কতবার ঢাকার কেরাণীগঞ্জে রিকশা চালিয়েছি তার হিসাব নেই।“

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2023, 10:33 AM
Updated : 2 April 2023, 10:33 AM

বাবা দিনমজুর, অভাবের সংসার, রিকশা চালিয়ে পড়াশোনার খরচ যোগাতেন কুড়িগ্রামের মমিনুর ইসলাম। দারিদ্র্যের বাধা অতিক্রম করে অদম্য চেষ্টায় হয়েছেন প্রভাষক।

কারো দয়া, সহানুভূতি কিংবা উৎকোচের বিনিময়ে নয় নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন মমিনুর। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যকুমরপুরের বাসিন্দা।

১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সারাদেশের তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মমিনুর।

তিনি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক (এনটিআরসি) কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসার ইংরেজি বিষয়ে প্রভাষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মমিনুর রহমান এক সময় ক্ষেত-খামারে কাজ ও রিকশা চালিয়ে নিজের খরচ জুগিয়ে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ইংরেজিতে বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন।

দৃঢ় মনোবল ও পরিশ্রম করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন তিনি। আর পড়াশোনা শেষে তিনি হয়েছেন ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক।

এ বিষয়ে কথা হয় মমিনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, “আমি যখন এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই তখন নানার বাড়ি থেকে একটা পুরাতন সাইকেল পাই। তা দিয়ে প্রাইভেট পরতাম। কিন্তু স্যারদের বেতন দিতে পারি নাই। অনেক কষ্টে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হই কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে। আমার মনে আছে, অন্যের জামাকাপড় পড়ে কলেজ করতাম।”

ছাত্রজীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অর্নাস পড়ার সময় কতবার ঢাকার কেরাণীগঞ্জে রিকশা চালিয়েছি তার হিসাব নেই। একবার কুমিল্লা কাজ করতে গিয়েছিলাম। সে সময় যারা আমাকে কাজের জন্য কুমিল্লা নিয়ে গিয়েছিলেন তারা বাসে সিট পর্যন্ত দেয়নি; দাঁড়ায়ে যেতে হয়েছে। এ সব কষ্টের কথা কি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলতে পারব বলেন?”

“সত্যিকার অর্থে ভেঙে না পরে সংগ্রামের মাধ্যমে জীবন এগিয়ে নিতে হবে। আমার মতো দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জীবনে কখনও হতাশ হওয়া যাবে না। যদি ইচ্ছা থাকে যেকোনোভাবে স্বপ্ন পূরর্ণ করা সম্ভব। যেটা আমি আমার জায়গা থেকে বুঝতে পেরেছি।

“যদি সেদিন কেরাণীগঞ্জ না যেতাম তাহলে আজকে আমি প্রভাষক হতে পারতাম না। এখন স্বপ্ন দেখি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার।”

মমিনুরের বাবা নুর ইসলাম বলেন, “দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতাম। ছেলেকে পড়াশোনার একটি টাকাও খরচ দিতে পারিনি। ছেলে নিজে দিনমজুরি ও ঢাকায় রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করেছে। তার ফল আজ সে পাইছে। আমি অনেক খুশি। এখন তার আয় দিয়ে আমার পরিবার চলছে।”

মা ময়না বেগম বলেন, “ছেলেকে ঠিকমত ভাত-কাপড় দিতে পারিনি। কষ্ট করি ছেলে আমার লেখাপড়া করছে।”

মমিনুরের প্রতিবেশী মিজান মিয়া বলেন, “মমিনুর ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। তার উদ্দেশ্য ছিল ভালো কিছু করার। সে আজ সফল হয়েছে।”

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, “সে আমাদের কলেজের ছাত্র। রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করেছে। কলেজের পক্ষ থেকে যেটুকু পেরেছি সহোযোগিতা করেছি। তার সাফল্যে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

“মমিনুরকে দেখে আমাদের এই অঞ্চলের দরিদ্র-পীড়িত শিক্ষার্থীরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি।”