জাবিতে প্রাধ্যক্ষের মেয়াদ নিয়ে মানা হচ্ছে না সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি হলের মধ্যে সাতটিতেই প্রাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 01:11 PM
Updated : 15 Jan 2023, 01:11 PM

প্রাধ্যক্ষের মেয়াদ ইস্যুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না।

২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর 'প্রভোস্ট নিয়োগের নীতিমালা' শিরোনামে হল প্রাধ্যক্ষের মেয়াদের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেখানে বলা হয়- “বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ সাধারণভাবে দুই বছর মেয়াদী হবে এবং প্রশাসনের প্রয়োজনে সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে উক্ত মেয়াদ আরও এক বছর নবায়ন করা যাবে। সিন্ডিকেট সভার তারিখ থেকে এই নীতিমালা কার্যকর বলে গণ্য হবে। ”

এখন পর্যন্ত ওই নীতিমালায় কোনও ধরনের পরিবর্তন হয়নি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক রহিমা কানিজ।

অর্থাৎ 'প্রভোস্ট নিয়োগের নীতিমালা' অনুযায়ী একজন প্রাধ্যক্ষ এক বছর নবায়নসহ সর্বোচ্চ তিন বছর দ্বায়িত্ব পালন করবেন, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি হলের মধ্যে সাতটি হলের ক্ষেত্রেই।

এর মধ্যে মেয়েদের পাঁচটি আর ছেলেদের হল দুইটি। এসব হলে প্রাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে জানা যায়, সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান, ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ এটিএম আতিকুর রহমান ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ হেল কাফী যোগদান করেন ১২ এপ্রিল ২০১৮ সালে।

হিসাব অনুযায়ী ২০২১ সালের এপ্রিল মাসেই এই চার প্রাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

এ ছাড়া নওয়াব ফয়জুন্নেছা ও প্রীতিলতা হলে অধ্যাপক নাহিদ হক ও আয়েশা সিদ্দিকা যোগদান করেন যথাক্রমে ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ও ২০১৯ সালের ২ জুলাই। মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর যোগদান করেন।

হিসাব অনুযায়ী এসব হলের প্রাধ্যক্ষের মেয়াদও এর মধ্যেই শেষ হয়েছে।

এদিকে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী একই সঙ্গে দুটি হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সঙ্গে নাম ঠিক না হওয়া নবনির্মিত ২২ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষেরও দ্বায়িত্ব পালন করছেন।

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করা হচ্ছে স্বীকার করে সিন্ডিকেট সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক রহিমা কানিজ বলেন, "কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে। দ্রুতই তিন বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত প্রাধ্যক্ষদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ বা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে শুধুমাত্র রেফারেন্স ছাড়া অন্য কিছু বলতে রাজি নন শিক্ষক মঞ্চের আহ্বায়ক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন।

তিনি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চায় না অনুকূল পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় চলুক। যার ফলে নিয়মের বাইরে গিয়ে এসব অরাজকতা চলছে।"

দুই হলে একজন প্রাধ্যক্ষের বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, "জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এরকম ঘটনা আগে ঘটেছে কি না জানা নাই। কর্তৃপক্ষ কি যোগ্য লোক পায় না, নাকি যোগ্য লোকের এতই অভাব; আমার বোধগম্য না।"

সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত কেনো মানা হচ্ছে না জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাপারটি আমাদের চিন্তায় আছে। নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে সামনের সিন্ডিকেট থেকে আমি বিবেচনায় রাখব।”