ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে মোংলার দূরত্ব কম হওয়ায় এর চাহিদা দিন দিন বাড়বে বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা।
Published : 28 Jul 2022, 01:20 PM
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রথমবারের মত মোংলা বন্দর দিয়ে বিদেশে পাঠানো হয়েছে; আর এ দিনটিকে স্মরণীয় বলছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মার্কস নেসনা নামে পানামার পতাকাবাহী একটি জাহাজ তৈরি পোশাক নিয়ে রওনা হয়। বন্দরের ৮ নম্বর জেটি থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজটির গন্তব্য পোল্যান্ড।
১৭টি কনটেইনারে ৩৪ টিইউজ গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে যাচ্ছে জাহাজটি।এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিশুদের পোশাক, জার্সি, কার্ডিগান, টি-শাট, ট্রাউজারসহ অন্যান্য পণ্য। এসব পোশাক ঢাকা ও আশপাশের এলাকার ২৭টি কারখানার তৈরি হয়েছে।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, পদ্মাসেতু চালুর পর ঢাকা থেকে ‘নিকটতম’ বন্দর এখন মোংলা। চট্টগ্রামের তুলনায় মোংলার পথের ‘দূরত্ব’ এবং ‘খরচ’ দুটোই কমবে বলে আমদানি ও রপ্তানিকারকরাও এখন আগ্রহী হচ্ছেন।
“মোংলা বন্দরের জন্য আজকের দিনটি স্মরণীয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এক মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে তৈরি পোশাক রপ্তানির নবযাত্রা শুরু হল।…।এরই ধারাবাহিকতায় আগামীতে গার্মেন্টসসহ অন্যান্য রপ্তানি পন্য এই বন্দর দিয়ে পরিবহন শুরু করবে।”
গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করার পরদিন সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। সহজ হয়ে যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ।
চেয়ারম্যান মুসা বলেন, ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। সেখানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ঢাকার ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহার করতেন না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তারা আগ্রহী হয়েছেন। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষও প্রস্তুতি নিয়েছে।
“জাহাজ হ্যান্ডলিং দ্রুত ও নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে সময় ও অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হন।”
গত অর্থবছরে মোংলা বন্দর ২১ হাজার গাড়ি আমদানির রেকর্ড করেছে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান মুসা বলেন, “আশা করছি গাড়ি কার্গো, কন্টেইনার আমদানি, গার্মেন্টস সামগ্রী আমদানিতে আগামী অর্থ বছরে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা ছাড়িয়ে যাবে।“
তিনি জানান, বন্দরকে আরও গতিশীল করতে নদী ড্রেজিংসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। বর্তমানে সাত মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে। আগামীতে নয় মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল জানান, মার্কস নেসনায় করে পাঠানোর জন্য গত শুক্রবার রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য নিয়ে বন্দরে আসেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের পণ্য কন্টেইনারে তোলা হয়।
“নিয়মিত যাতে এই বন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানি করা যায়, সেজন্য ইতোমধ্যে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এটি আগামীতে চলমান থাকবে।“
মেসার্স খুলনা ট্রেডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপক রকিবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পোশাক রপ্তানির জন্য রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে অনেক ‘বেশি’ সাড়া পাচ্ছেন তারা।
“দ্রুততম সময়ের মধ্যে কন্টেইনারগুলো ভর্তির কাজ করা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তা সম্ভব হয়েছে। আগামীতে বেশি বেশি পোশাক এই বন্দর দিয়ে বিদেশে রপ্তানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।“
বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তার সিংহভাগ যায় চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে। অবকাঠামো ঘাটতি, সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, ঢাকা থেকে মোংলা পৌঁছানোর ঝক্কিসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মোংলা বন্দর ব্যবহারের প্রবণতা এতদিন ছিল কম। যেটুকু বাণিজ্য হত, তার বেশিরভাগটাই আমদানি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে ১ কোটি ১৮ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়, আর রপ্তানি হয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৪১২ মেট্রিক টন পণ্য।