“পাট বপনের পর এখন পর্যন্ত তিন থেকে চার বার জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। এরপরও পাট গাছ মরে যাচ্ছে। এতে করে পাট আবাদে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।”
Published : 25 Apr 2024, 06:26 PM
একদিকে বৃষ্টি নেই, অন্যদিকে শ্যালোমেশিনে উঠছে না পানি। তারওপর তীব্র দাবদাহে ফসলি জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
পানির অভাবে পাট ক্ষেতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। বৃষ্টি না হলে ফসলহানির আশঙ্কা করছেন তারা।
যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, এই তাপমাত্রায় পাটে ক্ষতি হবে না। এজন্য অতিপ্রয়োজন ছাড়া পানি না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার হেক্টর। এরইমধ্যে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তীব্র তাপদাহে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষকেরা ফসল নিয়ে বিপাকে রয়েছেন।
তিনি বলেন, “তীব্র তাপমাত্রা ও খরা পাটের জন্যক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই তাপমাত্রায় পাটগাছ বড় হচ্ছে তবে ক্ষতি হবে না। যদি কিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েও যায় যখন বৃষ্টি হবে তখন কাটিয়ে উঠতে পারবে।
“আর এখন ব্যাপক হারে সেচ দেওয়ার দরকার নেই। যদি গরমে কচিপাতা ঝলসে যায় সে ক্ষেত্রে সেচ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া সেচ না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।”
সদর, পাংশা ও কালুখালি উপজেলার ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির অভাবে অন্য ফসলের তেমন একটা ক্ষতি না হলেও পাট ক্ষেত ক্ষতির মুখে রয়েছে। বছরের এই সময়ে বৃষ্টিপাত পাটের মাঠকে সবুজ করে তোলে। কিন্তু এবার পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে মাঠ।
শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচের চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ শ্যালোমেশিনে পানি উঠছে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। পানির অভাবে পাট ক্ষেত শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। খরায় পাট গাছ মরে যাওয়ার পাশাপাশি পোকা দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, “দুই তিনদিন পরপরই পানি দিচ্ছি। পানি দিয়ে কূল পাচ্ছি না। এক পাকিতে (২৬ শতাংশ) ৪ লিটার তেল লাগছে। এত পানি কী দেওয়া সম্ভব? শ্যালোমেশিনে পানি উঠছে না।
“এক পাকিতে ৫ থেকে ৬’শ টাকার তেল লাগে। এরপরও খরাতে পাট গাছ মরে যাচ্ছে। বিছা-পোকা লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে পাট ক্ষেত বাঁচানো যাবে না।”
সদর উপজেলার আরেক কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “পানির স্তর ৫০ থেকে ৬০ ফিট নিচে চলে যাওয়ায় ইঞ্জিন চালিত শ্যালোমেশিনে পানি উঠছে না। অধিকাংশ শ্যালোমেশিন এখন বন্ধ। যেগুলো চালু আছে সেগুলো থেকেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
“সেচ, সার, চাষ, শ্রমিক মিলে বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় পাট গাছ বাঁচিয়ে রাখতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে পানি সেচ দিতে হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে খরচ গুনতে হচ্ছে ৮’শ থেকে ১ হাজার টাকা।
“পাট বপনের পর এখন পর্যন্ত তিন থেকে চার বার জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। এরপরও পাট গাছ মরে যাচ্ছে। এতে করে পাট আবাদে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।” যোগ করেন তিনি।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এক পাকি জমিতে পানি সেচ দিতে গেলে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬’শ টাকা খরচ হচ্ছে। আমাদের টাকাও যাচ্ছে, ফসলও যাচ্ছে। আমাদের বোডিং (শ্যালোমেশিন) থেকে পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি না। এই সময়ে পাট অনেক বড় হয়ে যায়।
“সারা মাঠ সবুজ হয়ে থাকে। অথচ খরায় পাট গাছ মরে যাচ্ছে। অধিকাংশ বোডিং বন্ধ হয়ে গেছে, পানি না ওঠার কারণে।”
চন্দনী ইউনিয়নের কৃষক অধির কুমার বিশ্বাস বলেন, “শ্যালোমেশিনে পানিই ওঠে না। বেশিরভাগ শ্যালোমেশিন বন্ধ। দুই একটা দিয়ে পানি উঠলেও অনেক খরচ পড়ে যায়। সারাদিনেও এক পাকি জমি ভিজাতে পারি না। পাট নিয়ে খুবই ভোগান্তিতে আছি।”
পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের কৃষক কাত্তিক বিশ্বাস বলেন, “শ্যালোমেশিনে পানি উঠছেই না। ১০-১২ ফুট গর্ত করেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আমরাতো পাট নিয়ে চরম দুর্ভোগে আছি।”
ওই এলাকার আরেক কৃষক মোবারক মণ্ডল বলেন, “গত বছর ছয় থেকে সাত ফুট গর্ত করে পানি উঠাতে পারলেও এ বছর বারো ফুট গর্ত করেও পানি উঠাতে পারছি না।”
কালুখালি উপজেলার হরিণবাড়িয়া গ্রামের বেশিরভাগ শ্যালোমেশিনে পানি উঠছে না বলে জানান কৃষক আশরাফুল ইসলাম।
তিনি বলছিলেন, “যে কয়টায় ওঠে তাতে পানি একেবারেই কম। সকালে পানি দিলে বিকালেই নাই। এভাবে চলতে থাকলে পাট হবে না মরে যাবে। এখন আল্লাহ্ যদি একটু বৃষ্টি দিতো তাহলে সবারই ভালো হতো।