ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
Published : 06 Apr 2023, 03:37 PM
টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন এক কিশোরী।
বুধবার রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় ওই কিশোরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া।
গোলাম কিবরিয়া বড় মনি (৪৮) টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও শহর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি। মামলায় তার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও (৩৫) আসামি করা হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে কিবরিয়া বলেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে’ তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে।
ওসি আবু ছালাম বলেন, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমানকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য কিশোরীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট লুৎফুন্নাহারকে প্রধান করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে। এই বোর্ড ওই কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা করবে।
মামলায় কিশোরী অভিযোগ করেছেন, বড় মনি তাদের আত্মীয় এবং পূর্ব পরিচিত। মোবাইল ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে তাদের কথা হত।
এজাহারে বলা হয়, সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ হলে ওই কিশোরী বিষয়টি গোলাম কিবরিয়াকে জানান। কিবরিয়া সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে কিশোরীকে যেতে বলেন।
কিশোরীর অভিযোগ, সেখানে যাওয়ার পর তাকে শারিরীক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন কিবরিয়া। কিশোরী তাতে রাজি না হওয়ায় তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। পরে কক্ষে ঢুকে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন। ঘটনা প্রকাশ করলে ‘মেরে ফেলার হুমকি’ দেন।
প্রথমবার ‘ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে’ কিবরিয়া পরে আরও কয়েকবার ‘ধর্ষণ করেন’ বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন কিশোরী।
মামলায় তিনি বলেছেন, ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়াকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন।
তাতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে গোলাম কিবরিয়া ওই কিশোরীকে ‘তুলে নিয়ে যান’ এবং একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে রেখে পরে আবারও ‘ধর্ষণ’ করেন। তারপর গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী সেখানে ওই কিশোরীকে ‘মারপিট’ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।
সেখানে বলা হয়, ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ৩টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তারপর থেকে তাকে নানা হুমকি দেওয়া হত।
শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার জন্য মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন কিশোরী।
গোলাম কিবরিয়া বড় মনি অভিযোগ অস্বীকার করে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।“
মামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টাঙ্গাইল সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাদীকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নওয়া হবে।
“আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। এখনো কাউকে গ্রেপ্তর করতে পারিনি।”