ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে ‘কর্মবিরতি ও বর্জনে’ বিচারকাজ বন্ধ, ভোগান্তি

সকাল থেকে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতি পালন শুরু করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2023, 01:56 PM
Updated : 4 Jan 2023, 01:56 PM

আইনজীবী ও আদালত কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের বিচার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী।   

বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীর অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগ এনে বুধবার সকাল থেকে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতি পালন শুরু করে। 

অপরদিকে দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ বেগম শারমিন নিগার ও নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। তারা তিন দিনের আদালত বর্জনের কর্মসূচি দিয়েছেন। 

সকাল থেকেই আদালতের বিচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ১০ থেকে ১২ হাজার বিচারপ্রার্থী ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। তারা বিচার কাজের জন্য এসেও ফিরে যাচ্ছেন। নিরাপত্তার জন্য আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। 

আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনার সূত্রপাত গত ১ ডিসেম্বর। এদিন ছিল জেলা জজ আদালতের বছরের শেষ কার্যদিবস। এদিন  একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে ঘটনার সূত্রপাত হয়। 

বুধবার সকালে আদালত চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, আদালতের কর্মচারীরা নিজ নিজ কক্ষে না গিয়ে বাইরে অবস্থান করছেন। আদালতের বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। যে কারণে আদালতে কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। বিচার প্রার্থীরা এলেও তারা ফিরে যাচ্ছেন।

দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানবীর ভূঁঞা এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুলের নেতৃত্বে আইনজীবীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এরপর তারা সমিতি ভবনের সামনে সমাবেশ করেন।  

আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. তানবীর ভূঁঞা বলেন, ১ ডিসেম্বর জেলা জজ আদালতের শেষ কার্যদিবসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে একজন আইনজীবী বিলম্বে একটি মামলা দাখিল করেন। কিন্ত বিলম্বে দাখিল করায় মামলাটি তিনি গ্রহণ করেননি। 

তখন ওই আইনজীবী বিচারককে মামলাটি নেওয়ার অনুরোধ করেন এবং মামলাটি না নিলে একমাস দেরি হয়ে যাবে, এতে বাদীপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করেন। আদালতে গিয়ে জেলা আইনজীবী সামিতির সাধারণ সম্পাদকও বিচারককে মামলাটি নেওয়ার জন্যে অনুরোধ করেন। কিন্ত তিনি মামলাটি না নিয়ে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগি করেন বার সভাপতি। 

পরে আইনজীবী তানবীর ভূঁঞা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে নাজির মোমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, আদালত চত্বরে জাল স্ট্যাম্প বিক্রি বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছেন আইনজীবীরা। জাল স্ট্যাম্প বিক্রির সঙ্গে নাজির মোমিনুল জড়িত। এজন্য মোমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা জজের কাছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা জজ এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো নাজিরের পক্ষাবলম্বন করেছেন। 

গত ২৬ ডিসেম্বর আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করে ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয় বলেও জানান তানবীর ভূঁঞা। তিনি বলেন, এই বিষয়টি জেলা জজকে জানানো হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। 

আইনজীবী সমিতির নেতারা জানান, জেলা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারককে অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার, রোববার এবং সোমবার আদালত বর্জনের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। 

এ ব্যাপারে জেলা বিচার বিভাগীয় অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আইয়ুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের সকল কর্মচারী আজ থেকে একযোগে কর্মবিরতি পালন করছেন। একটি মামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিচারক এবং আদালতের কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন কিছু আইনজীবী। ফলে বাধ্য হয়ে কর্মবিরতির কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।”