চারদিকে সীমানা প্রাচীরে ঘেরা পার্কের প্রবেশদ্বারে টিকেট কাউন্টার আছে। পার্কের প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা।
Published : 16 Apr 2024, 07:33 PM
শরীয়তপুরে জেলা প্রশাসন পরিচালিত পার্কে টিকেট ছাড়া প্রবেশ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চার শিশুকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তবে শিশুদের সদুপদেশ দিলেও কান ধরিয়ে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি জানেন না, বলছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইন উদ্দিন।
সোমবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলা শিল্পকলা একাডেমির পাশে জেলা প্রশাসনের নির্মাণ করা পার্কে এ ঘটনা ঘটেছে।
শিশুদের কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ছবি ও ভিডিও করেন পার্কে আসা দর্শনার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব ছবি ও ভিডিওতে ইউএনওকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ঈদের দিন দুপুরে পার্কটির উদ্বোধন করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ। পার্কে শিশুদের খেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের ১৫-১৬টি রাইড বসানো হয়েছে। চারদিকে সীমানা প্রাচীরে ঘেরা পার্কের প্রবেশদ্বারে টিকেট কাউন্টার রয়েছে। পার্কের প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা।
ঈদের দিন দুপুর থেকে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা। পার্ক দেখভালের দায়িত্বে আছেন ইউএনও মো. মাইন উদ্দিন। সেখানে কয়েকজন গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্য পাহারায় রয়েছেন।
ভুক্তভোগী এক শিশুর অভিভাবক ও তুলাসার এলাকার বাসিন্দা আজমত উল্লাহ খান জানান, সোমবার বিকালে পার্কের পাশে খেলাধুলা করছিল শহরের তুলাসার, ব্যাপারী পাড়া ও স্বর্ণঘোষ এলাকার কয়েকটি শিশু। সন্ধ্যার দিকে তারা সীমানা প্রাচীর টপকে পার্কে প্রবেশ করলে গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ১০- ১৪ বছর বয়সী পাঁচ শিশুকে আটক করেন।
তাদের ধরে পার্কের উত্তর-পূর্ব দিকে আনা হলে সেখানে আসেন ইউএনও মো. মাইন উদ্দিন। এ সময় চার শিশুকে কানে হাত দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তখন কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুরা কাঁদতে থাকে।
পরে যাদের বয়স ১০ বছরের নিচে, তাদের কাছ থেকে পার্কে প্রবেশের টাকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যাদের বয়স ১৩ বছরের ওপরে, এমন দুজনকে আটকে রাখা হয়।
তবে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পার্ক বন্ধ করার সময় গ্রাম পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন ওই দুই শিশু তাদের চোখ এড়িয়ে পার্ক থেকে বের হয়ে যায়।
আটকে রাখা শিশুদের মধ্যে একজন শহরের একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তিনি বলেন, “তারা পার্কের সীমানা প্রাচীরের পাশে খেলছিল। পরে সীমানা প্রাচীরের ওপর উঠলে অন্য বন্ধুরা তাকে ধাক্কা মারে। তখন আনসার সদস্যরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক ও আরেক শিশুর অভিভাবক বলেন, “শিশুদের সঙ্গে এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি। এটা অমানবিক।”
এ ব্যাপারে ইউএনও মাইন উদ্দিন বলেন, “শিশুদের কান ধরিয়ে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। কয়েক শিশু দেয়াল টপকে পার্কে ঢুকেছিল। নিরাপত্তায় যারা ছিলেন, তারা তাদের ধরে এনেছেন। ওরা দাঁড়িয়ে ছিল, ভয়ে হয়তো কানে হাত দিয়েছে।
“তবে আমি তাদের (শিশুদের) বলেছি, ‘দেয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করা অপরাধ। এটা চুরির সমান অপরাধ। তোমরা আর কখনো এ কাজ করবে না। সৎ ও ভালো মানুষ হয় জীবন যাপন করবে।’ এ কথা বলে আমি তাদের ছেড়ে দিয়েছি।”
এছাড়া দুই শিশুকে দেড় ঘণ্টা আটকে রাখার ঘটনাটিও তার জানা নেই বলে জানান ইউএনও।
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।