শুক্রবার বেলা ৪টায় নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে মারা যান এই মুক্তিযোদ্ধা।
Published : 25 Jul 2022, 08:51 PM
গাইবান্ধায় পারিবারিক কবরস্থানে দুই ছেলে ও স্ত্রীর পাশে সমাহিত হয়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তার বাড়ির পাশের মসজিদে শেষ জানাজার পর তাকে কবরস্থানে নেওয়া হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে তার মরদেহ নিয়ে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার জেলার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ার হেলেঞ্চা গ্রামে ভেরাকোপা বিলে অবতরণ করে। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ভরতখালি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নেওয়া হয় গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহ।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ডেপুটি স্পিকার।
বিদ্যালয় মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অর্নার দেওয়া হয়, যা পরিচালনা করেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। বিদ্যালয় মাঠে বিকেল সাড়ে ৩টায় দ্বিতীয় জানাজা হয়। সেখানে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
অনেকে এ সময় আবেগাপ্লুত হন; কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন-প্রতিবেশী ছাড়াও দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এখান থেকে আবার অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ নেওয়া হয় গটিয়া গ্রামে। সেখানে শেষ জানাজার আগে বক্তব্য দেন ফজলে রাব্বী মিয়ার ছোট ভাই মো. ফরহাদ রাব্বীসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট সাইন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার রাত ২টার দিকে ফজলে রাব্বী মিয়া মারা যান। সোমবার সকালে মরদেহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসে। সকাল ১০টায় ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ মাঠে তার প্রথম জানাজা হয়। তারপর মরদেহ গাইবান্ধা নেওয়া হয়।
পেশায় আইনজীবী ফজলে রাব্বী মিয়ার জন্ম ১৯৪৬ সালে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার গাটিয়া গ্রামে।
জাতীয় পার্টির হয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ফজলে রাব্বী পরে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে এই দলেই ছিলেন তিনি।
তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।
২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদে যান। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধীদলীয় হুইপ ছিলেন।
নবম সংসদে ফজলে রাব্বী সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, কার্য উপদেষ্টা কমিটি, কার্য প্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দশম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে বসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এসময় তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটি ও পিটিশন কমিটির সদস্য এবং লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন।
নবম সংসদে সাবেক স্পিকার বিএনপির জমিরউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য সর্বদলীয় তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ফজলে রাব্বী।
অষ্টম সংসদের সময়কালে বৈদ্যুতিক বাতি কেনা, লিফট ব্যবস্থাপনা, বাগানের ঘাস কাটা ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ওই বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়।
ফজলে রাব্বী মিয়া তিন মেয়ে রেখে গেছেন। ২০২০ সালে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মারা যান।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে তার বিরোধিতার আন্দোলনে নেমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি কেবল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
পরে আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের যোদ্ধা হিসেবে অংশ নেন প্রয়াত ফজলে রাব্বী মিয়া।