ঈদের দ্বিতীয় দিনে ১৪ হাজার ৩০০ দর্শনার্থী পার্কে প্রবেশ করেছেন।
Published : 12 Apr 2024, 09:04 PM
রোজার ঈদের দ্বিতীয় দিনে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীদের বেশি ভিড় ছিল।
শুক্রবার সকাল ১১টায় সাফারি পার্কের ফটকে দেখা যায়, হাজার হাজার দর্শনার্থী টিকিটের অপেক্ষায় দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পার্কের প্রবেশ ফটকের বাইরে খালি জায়গায় বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
ফটকের বাইরে ব্যক্তিগত ও ভাড়ায়চালিত শত শত গাড়িও পার্ক করা ছিল। এসব গাড়িতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা পার্কে এসেছেন। ফটকের বাইরে ঘোড়ার গাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল। আছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান।
ফটক পেরিয়ে কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে রয়েছে পার্কের প্রধানতম আকর্ষণ কোর সাফারি পার্ক। সেখানে আলাদা বেষ্টনীতে উন্মুক্ত পরিবেশে রয়েছে বাঘ, ভালুক, সিংহ, জেব্রা, জিরাফসহ আফ্রিকান বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। সেখানেও বাসে উঠার জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীরা টিকিট কাটছেন।
কোর সাফারি পার্কের প্রবেশ ফটকে আটটি মিনিবাস দাঁড়ানো রয়েছে। কিছুক্ষণ পর পর দর্শনার্থীদের নিয়ে প্রাণীদের বেষ্টনীর ভেতর ঘুরে আসছে ওইসব মিনিবাস। এতে চড়ে পার্কের ভেতরে উন্মুক্ত পরিবেশে দেখা যায় বাঘ, সিংহ, ভালুক, জেব্রা, জিরাফসহ বিভিন্ন প্রাণী।
কোর সাফারির পশ্চিমে সাফারি কিংডমের প্রবেশ পথ। সেখানে আলাদা আলাদা টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা দেখছেন ম্যাকাও, টিয়া, ঘুঘুসহ বিভিন্ন বিদেশি পাখি। কেউ কেউ আবার ম্যাকাও পাখির সঙ্গে সেলফি নিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে কয়েকটি ম্যাকাও পাখি উড়ে এসে দর্শনার্থীর গায়ে বসছে। এতে উচ্ছ্বসিত দর্শকেরা যে যার মতো ছবি তুলে নিচ্ছেন।
বেলা ২টার দিকে পার্কের ভেতরে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। পার্কের ভেতরে হেঁটে ঘুরে ঘুরে দর্শনার্থীরা দেখছেন কুমির, জলহস্তী, মদন টাক, উটপাখি, ইমু পাখি, বিভিন্ন ধরনের সাপ, ঈগল, ভুবন চিল ও রঙিন মাছ।
শিশু দর্শনার্থীর জন্য সাফারি পার্কের একটি অংশে তৈরি করা হয়েছে শিশুপার্ক। সেখানেও টিকিট কাটতে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। তবে লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি-ঝামেলা শেষে শিশুপার্কে প্রবেশ করেই বিনোদন নিতে পারছেন তারা।
সাফারি পার্কের ভেতর পাখিশালায়ও বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল।
শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা থেকে আব্দুল মতিন দম্পতি এসেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে সাফারি পার্কে ঘুরতে এসে টিকিট কাটতে বেগ পেতে হলেও প্রাণী ও পশুপাখি দেখে সেই কষ্ট ভুলে গেছেন তারা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্ত্রী ও স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলেকে নিয়ে বাঘ-সিংহ দেখতে এসেছেন আবুল কাসেম। তিনি বলেন, “বাঘ দেখতে পেয়েছি, কিন্তু সিংহ দেখতে পাইনি। তাও আবার অনেক অনেক দূর থেকে দেখতে হয়েছে। আরও কাছে দেখতে পেলে সেলফি তুলতে সুবিধা হতো।”
মানিকগঞ্জ থেকে সালমা আক্তার পার্কে এসেছেন শাশুড়ি ও দেবরকে সঙ্গে নিয়ে।
তিনি বলছিলেন, “ঈদের পরদিনও এতো লোক হবে বুঝতে পারিনি। এদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। পার্কে প্রবেশ করতে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে এক ঘণ্টারও বেশি। কোর সাফারির বাসে উঠতে প্রায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এত সব ঝামেলার পর বাঘ ও সিংহ দেখতে পেয়েছি।”
ঢাকার দক্ষিণ খান এলাকা থেকে এসেছেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত পশু-পাখি ঘুরে দেখেছেন। পর্যটকদেরও অনেক ভিড় ছিল। কোর সাফারির লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেতে বেগ পেতে লেগেছে। হেঁটে হেঁটে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি দেখে আনন্দ পেয়েছেন তিনি।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা থেকে শুরু করে পার্ক খোলা থাকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। ঈদের দ্বিতীয় দিনে বিকাল ৪টা নাগাদ ১৪ হাজার ৩০০ দর্শনার্থী পার্কে প্রবেশ করেছেন। ঈদের দিনও পার্কে ছিল উপচেপড়া ভিড়।
ঈদের দিন পর্যটক ছিল ১৩ হাজার ৩১২ জন। ঈদের ছুটিতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে।
শ্রীপুর উপজেলার ইন্দ্রপুর গ্রামে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এতে ফটকে প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। তবে ১২ বছর বয়সী পর্যন্ত পর্যটকদের প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে প্রবেশমূল্য নেওয়া হয় ১০ টাকা।
ভেতরে প্রবেশের পর বিভিন্ন প্রাণী দেখার জন্য আলাদাভাবে নির্ধারিত দামে টিকিট ক্রয় করতে হয়। পার্কটির প্রধান আকর্ষণ হলো আফ্রিকান কোর সাফারি। এটি একটি বিশেষায়িত প্রাণীর বাসস্থান, যেখানে কেবল আফ্রিকা থেকে আনা বাঘ, সিংহ, হরিণ, জিরাফ, বন গরু, জেব্রাসহ আরও অনেক প্রাণী রয়েছে।
পার্কের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আটটি পর্যটক বাসে করে কোর সাফারি দেখার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পর্যটক বাসের টিকিট ফি ১৫০ টাকা। বাসে ১২ বছর বয়সী পর্যটকদের জন্য ৫০ টাকা ও শিক্ষার্থীদেরও ৫০ টাকা প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
পার্কে রয়েছে ‘নাইন-ডি’ থিয়েটার। এখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রাণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
কুমির প্রজননকেন্দ্র, প্রজাপতি পার্ক, প্রাণী জাদুঘর, ওয়াটার ডিসকভারি, ওয়াচ টাওয়ার, ম্যাকাও, ময়ূর, কবুতর, ওয়াটার বোটসহ বিভিন্ন ইভেন্ট রয়েছে পার্কজুড়ে।
শিশুদের জন্য রয়েছে আধুনিক থিম পার্ক।