আগে ঈদের সময় একদিনে ঢাকা থেকে বরিশালে ২৫টি লঞ্চ আসার রেকর্ড থাকলেও এবার সাত-আটটির বেশি চলবে না বলে ধারণা মালিকদের।
Published : 12 Apr 2023, 05:06 PM
পদ্মা সেতু হলে লঞ্চের যাত্রী কমে যাবে জানতেন, কিন্তু এত কম হবে সেই ধারণা ছিল না বরিশাল-ঢাকা নৌ-পথের লঞ্চ মালিকদের। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি। এমন সংকটে এবার তাই ঈদে বিশেষ লঞ্চ সেবা পরিচালনা করার কোনো সিদ্ধান্তই নেননি তারা।
তবে বরিশাল নৌ-বন্দর কর্মকর্তার দাবি, যাত্রীদের জীবন নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। প্রয়োজন হলে বিশেষ সেবায় বাড়তি লঞ্চ দেওয়া হবে।
অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার (যাপ) সহসভাপতি ও সুন্দরবন লঞ্চের সত্ত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, “আমাদের লঞ্চ ব্যবসার প্রথম ক্ষতিটা হয়েছিলো পদ্মা সেতুর কারণে। তারপরও যে পরিমাণ যাত্রী ছিলো তাতেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যেতো। কিন্তু শেষ ক্ষতিটা হয়েছে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে।
তিনি জানান, তার ছয়টি লঞ্চ রয়েছে। যাত্রী সংকট আর ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এর মধ্যে এখন মাত্র দুইটি চলাচল করছে। ঈদেও দুইটি চলবে।
রিন্টু বলেন, “তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর সরকারের পক্ষ থেকে যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে তা শতভাগ আদায় করলেও আর্থিক ক্ষতি কাটানো যেত। কিন্তু আমরা তাও করতে পারছি না।
“কারণ সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করলে যাত্রী কমে যায়। তাই যাত্রী ধরে রাখতে ভাড়া কমিয়ে রাখছি।”
বরিশাল-ঢাকা রুটের অন্যতম বিলাসবহুল লঞ্চ সুরভী কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা জানতাম পদ্মা সেতু হলে লঞ্চের যাত্রী কমে যাবে। কিন্তু এত কম হবে সেই ধারণা ছিলো না।
তিনি বলেন, “বর্তমানে মানুষ টাকার চেয়ে সময়ের মূল্য দেয় বেশি। তারা সাড়ে তিন ঘণ্টায় আসতে বা যেতে পারে। সেখানে ৮-৯ ঘণ্টা বসে থাকতে চায় না। তাই লঞ্চের যাত্রী সংকট রয়েছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ উঠানো কষ্ট হয়।
“শুধু বরিশাল-ঢাকা রুটেই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে তাই বর্তমানে রোটেশন করে লঞ্চ চালানো হয়। কিন্তু এতেও তেমন একটা সুফল মেলেনি। বাধ্য হয়ে অনেক লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়। রোটেশনে একদিন পাঁচটি লঞ্চ থাকলেও এখন দুইটি করে চলাচল করে।”
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক কবির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে নিয়মিত বরিশাল-ঢাকা রুটে সাত-আটটি লঞ্চ চলাচল করত।
“ঈদ ও কোরবানির তিনদিন আগে থেকে একদিনে ঢাকা থেকে ২৫টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে আসার রেকর্ডও রয়েছে। কিন্তু এখন যাত্রীর চাপ কম। আগের মতো আর লঞ্চ চলবে না।”
মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ঢাকায় বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যানের সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ঈদে যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বিশেষ সার্ভিসের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
নৌ-পরিবহন সংস্থার নেতা সাইদুর রহমান রিন্টুও বলেন, “এবারে ঈদে বিশেষ সার্ভিসের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মনে হয় হবে না। তেলের দামের কারণে ঈদে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা বেশি হলেও বাড়তি ট্রিপ দেবার মত অবস্থা তৈরি হবে না। যে কারণে আমার ধারণা, দৈনিক সাত-আটটির বেশি লঞ্চ চালানো সম্ভব হবে না।”
তবে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, একেকটি লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সর্বনিম্ন সাতশত থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার। যদি সাত-আটটি লঞ্চ চালানো হয় তবে তো একেকটিতে ধারণ ক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে।
“এতে যাত্রীর জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। লঞ্চ মালিকদের অধিক মুনাফার কারণে তো যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না। এ ছাড়া এখন কালবৈশাখীর মৌসুম। যে কোনো সময় ঝড় হতে পারে। তাই প্রশাসনকে নিয়ে নিয়মিত তদারকি করা হবে।”
আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে যাত্রী চাপ শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্ধারিত যাত্রীর পর বাড়তি যাত্রী পরিবহন করতে দেওয়া হবে না। তাই ঘাটে বিশেষ সেবার জন্য আরও অন্তত দুই-তিনটি লঞ্চ থাকবে। প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করা হবে।
সুরভী কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবিরও বলেন, লঞ্চের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বর্তমানে অনিয়মিতভাবে চালানো হয়। তারপরেও এবার ১৮ বা ১৯ এপ্রিল থেকে নিয়মিতভাবে লঞ্চ চালানো হবে। যাত্রীর চাপ যদি বেশি থাকে তাহলে বিশেষ সেবা হিসেবে ডাবল ট্রিপ দেওয়া হবে। কেননা যাত্রীদের তো আর ঘাটে বসিয়ে রাখা যাবে না।