রেলের জন্য প্রস্তুত পদ্মা সেতু, মঙ্গলবার চলবে ‘গ্যাং কার’

সেতুর ২৫ নম্বর খুঁটির কাছে রেলপথের ৭ মিটার অংশে ঢালাইয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পাথরবিহীন রেল লাইনের নির্মাণ কাজ।

ফারহানা মির্জামুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2023, 12:58 PM
Updated : 3 April 2023, 12:58 PM

পদ্মা সেতুতে রেলপথের সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে; এখন অপেক্ষা কেবল ট্রেন চলাচলের।   

মঙ্গলবার থেকে সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ‘ট্র্যাক কার’ চলানো হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ‘গ্যাং কার’ নামে পরিচিত ‘ট্র্যাক কার’ বিশেষ আকৃতিতে নির্মিত রেল ইঞ্জিন। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুতে এর আগেই রেললাইন তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। শুধু একটি স্লিপারের অভাবে সাত মিটার ঢালাইয়ে বিলম্বিত হয়। গত বুধবার সেতুর ২৫ নম্বর খুঁটির কাছে রেলপথের সেই ৭ মিটার অংশে কংক্রিটের ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

কংক্রিট জমাট বাঁধার জন্য ন্যূনতম ৪৮ ঘণ্টা প্রয়োজন হয়। আর ৭২ ঘণ্টায় তা পরিপূর্ণভাবে জমাট বেঁধে যায়। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢালাইয়ের ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রম হওয়ার দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

তারা জানান, কনক্রিটের কোথাও কোনো ফাটল নেই। কংক্রিট মিশ্রণের রাখা নমুনাও ল্যাবে পরীক্ষা করে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে।

শনিবার ঢালাইয়ের ৭২ ঘণ্টা অতিক্রম হওয়ার পর প্রকৌশলীরা জানান, পদ্মা সেতুর রেললাইন এখন ট্রেন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ জানান, তাদের প্রকৌশলী টিম সবশেষ ঢালাই অংশ পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। ঢালাই অংশের কিউব কেটে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। সব ক্ষেত্রেই সন্তোষজনক ফল এসেছে। দুই পাড়ের ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্টসহ মোট ১৩ কিলোমিটার পাথরবিহীন রেলপথ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।

এ ছাড়া মাওয়া স্টেশন থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে ২৯ কিলোমিটার পাথরসহ রেললাইনের কাজও শেষ। এ পথেও পরীক্ষামূলক রেল চালানো হবে।

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নিচতলায় ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রেলপথ। মূল সেতুর বাইরের অংশে জাজিরা প্রান্ত থেকে গত বছরের ২০ অগাস্ট কংক্রিটিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তবে মূল সেতুতে লেভেলজনিত চ্যালেঞ্জের কারণে উচ্চ পর্যায়ের নকশা তৈরি করতে কিছুটা সময় লেগে যায়। তাই মূল সেতুতে পুরোদমে কংক্রিটিং শুরু হয় ২৩ নভেম্বর। আর শেষ হয় গত ২৯ মার্চ।

পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘গ্যাং কার’ দিয়েই এই পরীক্ষামূলক রেল চালানো হবে। পরিকল্পনা থাকলেও রেল কোচ এখনই আনা হচ্ছে না। এ ছাড়া আরও অনেক খুঁটিনাটি কাজ বাকি আছে। রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে ওয়েল্ডিং করা হচ্ছে। সেতুর ভায়াডাক্টে রেলিং স্থাপন হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে অটো সিগন্যাল সিস্টেম।

এ ছাড়া রেল স্টেশনগুলোর কাজও কিছুটা বাকি। তাই যাত্রীবাহী রেল চলাচলে আরও তিন মাস লেগে যেতে পারে।

জানা যায়, রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন বসবে।

Also Read: পদ্মা সেতুর রেল লাইনে চললো পরীক্ষামূলক ট্রেন

প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশের বেশি। আর পুরো প্রকল্পকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ ভাগ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ। তবে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটারের অংশে আগামী সেপ্টেম্বর যাত্রীবাহী রেল চলাচলের আশা করছেন তিনি।

এ ছাড়া আগামী বছরের জুনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারে রেল চলাচল করবে। লেভেল ক্রসিংবিহীন এই রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের রেল স্টেশনসহ নতুন ১৪টি স্টেশন নির্মাণ এবং পুরনো ছয়টি স্টেশন উন্নয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতু হয়ে যশোর রেলপথে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। মিয়ানমার হয়ে চীনের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেল রুটটিও। প্রস্তাবিত রুটটি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম দোহাজারি হয়ে মিয়ানমারের ঘুমধুম সীমান্তে গিয়ে মিশবে। এর আগের ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটে বাংলাদেশের তিনটি রুট সংযুক্ত হয়েছে। রুট তিনটির প্রথমটি গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতকে সংযুক্ত করে দর্শনা-ঈশ্বরদী-জামতৈল-জয়দেবপুর-টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারি হয়ে ঘুমধুম সীমান্তে মিশেছে।

পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু ঘিরে নতুন রেলপথ বদলে দেবে দেশের রেল নেটওয়ার্ক।