কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
Published : 12 Apr 2023, 03:36 PM
মাদক কারবারের জন্য কুখ্যাতি পাওয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে ‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে’ তিন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কয়েক দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সার্কেল) আবির হোসেন জানান।
গুলিবিদ্ধ মো. সানি (১৭), মো. পারভেজ (২৫) ও মো. রোমান রহমানকে (১৮) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সানির অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, তিনজনের মধ্যে রোমান পেশায় দিনমজুর, পারভেজ সোয়েটার কারখানার শ্রমিক এবং সানি ফল বিক্রেতা। তিনজনেরই পায়ে গুলি লেগেছে।
এছাড়া সংঘর্ষে বাদল (২২) ও আকাশ (২৩) নামের দুজনসহ অন্তত দশজনের আহত হয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
চনপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ‘মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে’ মঙ্গলবার ইফতারের পর শাহাবউদ্দিন ও শমসের তাদের দলবল নিয়ে জয়নাল আবেদীনের ‘বাহিনীর’ সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়৷ উভয়পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও গুলতি নিয়ে সংঘর্ষে নামে। গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক দফায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে৷ এরপর সকালে আরেক দফায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
জয়নাল চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। শাহাবুদ্দিন ও শমসের ২ নম্বর ওয়ার্ডের। গুলিবিদ্ধ তিনজনই জয়নালের সহযোগী বলে স্থানীয়রা জানান।
গত বছরের জুনে একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জয়নাল। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জয়নাল গ্রুপ আর শাহাবউদ্দিন ও শমসের গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল৷ পরে রাত ২টার দিকে তারা আবার সংঘর্ষে জড়ায়৷
“জয়নাল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেড় মাস আগে সে জামিনে ছাড়া পায়৷ এতদিন এলাকায় আসেনি৷ এলাকায় আসার পরপরই তার বাহিনী নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়৷”
সংঘর্ষে উভয়পক্ষেরই কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং তিনজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে আহতদের স্বজনদের বরাতে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, “চনপাড়ার বজলু মেম্বার সম্প্রতি কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যাওয়ার পর ওই আসন শূন্য হয়। ওই এলাকার আধিপত্য নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে জয়নাল গ্রুপ ও সমশের গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে তাদের ধারণা।”
বজলুর রহমান রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জের আলোচিত চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ছিল। স্থানীয়ভাবে তিনি `বজলু মেম্বার’ বলে অধিক পরিচিত ছিলেন।
গত বছর বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাদক প্রসঙ্গ উঠে আসে। আলোচনায় আসেন বজলুর রহমান। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর চনপাড়ার পূর্বগ্রাম এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে র্যাব তিনটি মামলা দায়ের করে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ অন্তত ২৩টি মামলা ছিল বলে তখন জানিয়েছিল র্যাব।
গত ৩১ মার্চ কারা তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বজলুরের মৃত্যুর পর চনপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় বলে স্থানীয়রা বলছেন।
কয়েক দফা সংঘর্ষের পর চনপাড়ায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে৷ তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চনপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের সিনিয়র এএসপি আবির হোসেন৷