গাজীপুরে রবিউলের মৃত্যু: ওসিসহ ৩ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সুপারিশ

ব্যবসায়ী রবিউলকে নিহতের চারদিন আগে আটক করার ‘কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে’ বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2023, 01:58 PM
Updated : 6 Feb 2023, 01:58 PM

গাজীপুরে ব্যবসায়ী রবিউলকে বাসা থেকে থানায় নেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে বাসন থানার ওসি ও দুই এএসআইকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম সোমবার নিজ কার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

বরখাস্তের সুপারিশ করা এই তিন কর্মকর্তা হলেন বাসন থানার ওসি মালেক খসরু, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুর রহমান ও এএসআই নুরুল ইসলাম।

গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান শাহনাজ গলির বাসিন্দা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে ১৪ জানুয়ারি রাতে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় বাসন থানার পুলিশ। পরে পুলিশ পরিবারের সদস্যদের জানায়, ১৭ জানুয়ারি রাতে থানা থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় রবিউল মারা গেছেন।

এররপ এলাকায় পুলিশের নির্যাতনের রবিউলের মৃত্যুর খবর প্রচার হলে ১৮ জানুয়ারি সকালে স্থানীয়রা মহাসড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালায়।

এ ব্যাপারে দুইটি মামলা হয়েছে এবং ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেলায়ার হোসেন, উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার খায়রুল ইসলাম।

সোমবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ কমিশনার জানান, ঘটনার পরপরই বাসন থানার দুই এএসআই মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ওসি মালেক খসরুরুকে ঘটনার কিছুদিন পর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

“তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে বরখাস্তের সুপারিশ করে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।”

তদন্ত কমিটির বরাতে কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে ‘নিহতের চারদিন আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে কিছুটা সত্যতা’ পাওয়া গেছে।

তাছাড়া রবিউলকে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগেই থানায় ডেকে আনা হয়েছিল বলে যে অভিযোগ তাও সঠিক কিনা তদন্ত করা হচ্ছে, বলেন  জানান।

তবে ‘থানা হেফাজতে রবিউল ইসলামের মৃত্যু হয়নি’ – এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন, “আমরা নিহত রবিউলের পরিবারের সদস্য, তার বাসার আশপাশের মানুষজন এবং এর সঙ্গে যুক্ত-অযুক্ত ৮৭ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেছেন রবিউলকে পুলিশ তার মৃত্যুর চারদিন আগেই গ্রেপ্তার করেছিল।”

চারদিন আগেই রবিউল ইসলামকে ডেকে নেওয়া, রাতে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া, ছেড়ে দেওয়ার সময় তাকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি পৌঁছে না দেওয়া, থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, থানার সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হওয়াসহ প্রভৃতি বিষয় মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে বলে তিনি জানান।

বাসন থানায় সিসিটিভির মনিটরিং ছিল এবং ঘটনার কয়েকদিন আগে কেন সিসিটিভি অকার্যকর ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

“সিসিটিভি ক্যামেরা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য জিএমপি হেডকোয়ার্টার্স থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এতে কে বা কারা ক্যামেরা বন্ধ বা ক্ষতিসাধন করছে অথবা বন্ধ করে রাখছে তা ধরা পড়বে।”

তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে যেসব বিষয় হাতে পেয়েছে তারই আলোকে বাসন থানার সাবেক ওসি মালেক খসরুর ব্যাপারে মহাপুলিশ পরিদর্শককে (আইজিপি) সুপারিশ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, অধিক মেয়াদে তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু বিষয় তদন্তে বেরিয়ে আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তাছাড়া রবিউলকে জুয়া খেলার যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সে অভিযোগটি সঠিক ছিল কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে।

“আমরা ঘটনা প্রসিডিংয়ের জন্য একটা সুপারিশমালা তৈরি করেছি, যার ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে।”

সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন, উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।  

আরও পড়ুন:

Also Read: থানায় নেওয়ার পর মৃত্যু: ‘ময়নাতদন্ত ছাড়াই’ সেই ব্যবসায়ীর লাশ হস্তান্তর

Also Read: গাজীপুরে থানায় নেওয়ার পর ব্যবসায়ীর মৃত্যু, তদন্তে কমিটি