গাজীপুরে থানায় নেওয়ার পর ব্যবসায়ীর মৃত্যু, তদন্তে কমিটি

এ ঘটনা তদন্তে গাজীপুর মহানগর পুলিশ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2023, 12:51 PM
Updated : 18 Jan 2023, 12:51 PM

গাজীপুর নগরীর বাসন থানায় নেওয়ার তিনদিন পর এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পেয়েছে পরিবারের সদস্যরা।   

পুলিশ শনিবার তাকে থানায় নিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে স্বজনরা তার মৃত্যুর খবর পান।

নিহত রবিউল ইসলাম (৪০) রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুর গ্রামের আব্দুল বাকীর ছেলে। তিনি গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস পেয়ারা বাগান এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থেকে সুতার ব্যবসায় করতেন।

রবিউলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার সকালে এলাকাবাসী ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। তারা কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।  

এদিকে, বুধবার রবিউলের ছোট ভাই মহিদুল ইসলাম তার ভাইয়ের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া নিয়ে যেতে ঢাকার শাহবাগ থানায় আবেদন করেছেন। 

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনা তদন্তে মহানগর পুলিশ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

নিহতের পাশের কক্ষের এক ভাড়াটে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত শনিবার রাতে অনলাইন জুয়া খেলার অভিযোগে চারজনকে ধরে নিয়ে যায় বাসন থানার দুই এসআই। এরপর তিনজনকে ছেড়ে দিলেও রবিউলকে আটক রাখে।

পরিবারের বরাতে এই ব্যক্তি আরও বলেন, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ রবিউলকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তার স্ত্রীকে থানায় ডেকে নিয়ে যায় এবং জানায় যে রবিউলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে; পরে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এবং ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন। এরপর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে তার মৃত্যুর খবর পান।

নিহত রবিউলের বাড়ি গিয়ে তার স্ত্রী ও স্বজনদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে, এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে ভোগড়া বাইপাস সড়কের ঢাকা-টাঙ্গাইল অংশে এবং পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে এলাকাবাসী।

বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী লাঠিসোটা নিয়ে প্রথমে ভোগড়া বাইপাস সড়কের ঢাকা-টাঙ্গাইল অংশে এবং পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে।

“এক পর্যায়ে তারা ওই মহাসড়কে চারটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ভোগড়া বাইপাস মোড়ে পুলিশ বক্সে ভাংচুর চালায়। এতে ওই এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।”

পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে দেড় ঘণ্টা পর ওই পথে গাড়ি চলাচল শুরু হয় বলে ওসি খসরু জানান।

রবিউলের মৃত্যুর বিষয়ে ওসি খসরু সাংবাদিকদের বলেন, “থানার দুই এসআই রবিউলকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছিল। পরে তার স্বজন ও স্থানীয়দের আবেদন এবং তিনি ভালোলোক সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি গাড়িচাপায় গুরুতর আহত হন। স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

“তবে স্বজন ও এলাকাবাসী রটান যে রবিউল পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, “মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে অচেতন অবস্থায় জরুরি বিভাগে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”

শাহবাগ থানায় রবিউলের ভাই মহিদুল ইসলামের করা আবেদনে বলা হয়, তার ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ব্যাপারে কারো বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। তিনি তার ভাইয়ের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া নিয়ে যেতে চান।  

তদন্ত কমিটি গঠন

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তদন্তে অতিরিক্ত কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অন্যরা হলেন উপ-কমিশনার আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. খায়রুল ইসলাম।

তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, “পোস্ট মর্টেমের আগের মৃত্যুর কারণ বলা যাবে না। রবিউলের মৃত্যুতে যদি কোনো পুলিশের অবহেলা থাকে বা অপরাধী হয় তবে সে যে-ই হোক তার বিচার হবে।”