হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ঈদ ঘিরে এ মহাসড়কে ভোগান্তি হতে পারে এমন অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১২টি স্থান তারা চিহ্নিত করেছেন।
Published : 28 Mar 2024, 08:49 PM
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চলা দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তির করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া কথা জানিয়েছে কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার পদে থাকা অতিরিক্ত উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক মো. খাইরুল আলম বলেছেন, যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামলে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে প্রস্তুত হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা।
ওই সময় পোশাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি মাঠে কাজ করবেন হাইওয়ে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা।
বুধবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর এলাকার একটি হাইওয়ে রেস্তোরাঁর মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় আসন্ন ঈদুল ফিতরে মহাসড়কটি হয়ে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশের নানা প্রস্তুতির কথা জানানো হয়।
সভায় জানানো হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যুক্ত দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলা।
গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে ঈদযাত্রায় থাকবে যাত্রীদের বাড়তি চাপ।
মতবিনিময় সভায় হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঈদ ঘিরে এ মহাসড়কে ভোগান্তি হতে পারে এমন অধিক গুরুত্বপূর্ণ ১২টি স্থান তারা চিহ্নিত করেছেন।
এর মধ্যে- দাউদকান্দির বলদাখাল বাসস্ট্যান্ড, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, নিমসার বাজার ও ইউটার্ন,
ক্যান্টনমেন্ট মোড় (উভয়মুখী), আলেখারচর বিশ্বরোড, বিসিক মোড়, চৌদ্দগ্রাম বাজার, লালপোল, ভাটিয়ারী পয়েন্ট, ফৌজদারহাট ইউটার্ন, সীতাকুণ্ডু বাসস্ট্যান্ড/বড় দারোগারহাট স্কেল।
আর কম গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি স্থান হিসেবে শহীদনগর বাসস্ট্যান্ড, আমিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, কোর্টবাড়ি ইউটার্ন, জাগুরঝুলি কাটা, নুরজাহান হোটেলের সামনের কাটা, সদর দক্ষিণ থানার সামনের কাটা, সুয়াগাজী বাজার (উভয়মুখী), নাজিরা বাজার ইউটার্ন, বারবকুণ্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড়, ফুটলিং এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।
এসব স্থানে অধিক নজর রাখার কথা জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।
যানজটের শঙ্কাপূর্ণ স্থানগুলোর বিষয়ে মতবিনিময় সভায় আলোচনা হয়েছে। এর একাধিক কারণও চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
সেগুলোর মধ্যে আছে- মহাসড়কের পাশে অবৈধ হাটবাজার ও স্থাপনা, মহাসড়কে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা, অবৈধ পার্কিং, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, পণ্যবাহী গাড়িতে ওভার লোডের কারণে ধীরগতি, পথচারীদের অসচেতনতা, টোলপ্লাজায় ধীরগতিতে টোল আদায়, দুর্ঘটনার কারণে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া, ত্রুটিপূর্ণ/ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে বিকল হয়ে যাওয়া, সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করে গাড়ি চালানো, মহাসড়কে নিষিদ্ধ গাড়ি চলাচল।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের তথ্যমতে, রোজা ও ঈদযাত্রায় মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রয়েছে তাদের বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম।
সড়কজুড়ে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে কমিউনিটি পুলিশ।
বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে এবারের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন হবে বলে আশা করছে হাইওয়ে পুলিশ।
এছাড়া যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রতিযোগিতাহীন গাড়ি চালানোর পাশাপাশি সড়ক পারাপারে পথচারীদের সচেতন থাকার পরামর্শ তাদের।
এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৩১ কিলোমিটার সড়ককে ভোগান্তিমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
মতবিনিময় সভায় হাইওয়ে পুলিশ জানায়, মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দুটি সেক্টর ও ২১টি সাব সেক্টর থাকবে।
বিশেষ টিম, মোবাইল ডিউটি থাকবে ৩৪টি, পিকেট ডিউটি ১৫টি, কুইক রেসপন্স টিম মোটরসাইকেলযোগে থাকবে ১৫টি, পিকআপ যোগে ১৫টি, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ একটি, রেকার ডিউটি সরকারি পাঁচটি ও বেসরকারি ছয়টিসহ সর্বমোট ১১টি, অ্যাম্বুলেন্স ডিউটি দুটি, কন্ট্রোলরুম একটি, অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম বা ওয়াচ টাওয়ার থাকবে ৩৫টি।
এভাবে সব পদের সর্বমোট ৬৮০ জন পুলিশ ও ৩৫০ জন কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য সার্বক্ষণিক মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মহড়া দেবেন।
একইসঙ্গে জেলা পুলিশ মহাসড়কের পাশের থানা এলাকায় কাজ করবে, যেখানে সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য সড়ক ও জনপদের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা কাজ করছেন।
যানজটমুক্ত, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অতিরিক্ত ব্যবস্থার পাশাপাশি মহাসড়কে ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা ব্যবস্থা।
অতিরিক্ত উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক খাইরুল আলম বলেন, “মহাসড়কে কোথাও হাইওয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করলে তাকে ক্লোজ করা হবে। কোনো প্রকার যানবাহন দাঁড় করে হয়রানি করা যাবে না।”
মহাসড়কের যেসব এলাকায় বাজার ও বাসস্ট্যান্ড আছে, সেসব স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নিষিদ্ধ তিনচাকার গাড়ি আটক হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার সুপারিশ আমলযোগ্য নয়।
“কুমিল্লা অংশে দাউকান্দিসহ একাধিক স্থানে সিসি ক্যামারার মাধ্যমে সড়কের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “কুমিল্লা অঞ্চলের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে কিছুটা যানজট রয়েছে। তবে এবারের ঈদে সবার যাত্রা নির্বিঘ্ন করা হবে।”
মতবিনিময় সভায় কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামসুল আলম, সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা, জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন, কমিউনিটি পুলিশিং কুমিল্লা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক কাজী শারমিন আউয়াল পারভেজ বাপ্পি, কুমিল্লা জেলা বাস মালিক গ্রুপ কার্যকরী সভাপতি তাজুল ইসলাম, আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির লাইন সম্পাদক আবুল বাশার, কমিউনিটি পুলিশিং দাউদকান্দির সভাপতি রকিবুল হাসান, ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন মোজাম্মেল চৌধুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সহ সভাপতি আবুল বাহার ছিলেন।