“কোনো রোহিঙ্গা যাতে অনুপ্রেশ করতে না পারে, সেজন্য আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
Published : 09 Apr 2024, 03:34 PM
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে ফের মর্টারশেল ও গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। বিস্ফোরণের শব্দে সীমান্তের এপারে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্তিতিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
সীমান্ত এলাকার লোকজন বলছে, ওপার থেকে ভেসে আসা গোলাগুলি, বোমা ও মর্টারশেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছে বাংলাদেশিদের মাঝে।
সোমবার সকাল থেকে রাতভর ও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় শতাধিকের বেশি মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ সীমান্ত। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তারা।
হ্নীলা ইউনিয়নের বাসিন্দা লবণ চাষি আব্দুস ছামাদ বলেন, “কাজে মাঠে যাইতে ইচ্ছে করে না। কোন সময় জানি এসে আবার যেন গায়ে লাগে।
“শুধু গোলাগুলি আর গোলাগুলির শব্দ। কি অবস্থার মধ্যে আছি। এর শেষ কোথায় আল্লাহই জানে। ”
মঙ্গলবার টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “নাফনদীর ওপাশ থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। আর আমাদের সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া কোনো রোহিঙ্গা যাতে অনুপ্রেশ করতে না পারে, সেজন্য আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, শাহ পরীর দ্বীপ হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্ব দিকে মিয়ানমারের মংডু শহরের উত্তরে বলিবাজার, শিলখালী, নাকপুরা, হাস্যুরাতা ও নাখ্যংদিয়া থেকে মর্টারশেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। নতুন করে ওই সব এলাকায়ও সংঘাত ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।
এছাড়া সাবরাং ইউনিয়ন, সেন্টমার্টিন, হোয়াইক্যংয়ের খারাংখালী, ঝিমংখালী, হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, পুরান বাজার, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, টেকনাফ সদরের আলীখালি, লেদা, মুচনী, জাদীমুড়া, দমদমিয়া, টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া, চৌধুরীপাড়া, কেকেপাড়া ও জালিয়াপাড়াসহ অন্তত ৩০টি গ্রামে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্য সময়ের তুলনায় বন্দরে মিয়ানমার থেকে পণ্যবাহী জাহাজ আসা কমে গেছে। আগে যেখানে দিনে ২০ থেকে ১৫টা মাছ, কাঠ ও অন্যান্য পণ্যের জাহাজ ঢুকতো, সেখানে দিনে ১ থেকে ২টা জাহাজ আসে মালামাল নিয়ে।
সাবরাং ইউনিয়নের লেজির পাড়ার বাসিন্দা মো. ফয়েজ বলেন, “কী একটা অবস্থায় আছি। সারারাত গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হয় বিজলি চমকাচ্ছে।
“এমন বিকট শব্দ আগে কখনও শুনি নাই। সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে দিনযাপন করি।”
সকালে সাবরাং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আহমদ বলেন, “মর্টারশেল আর বিস্ফোরণের শব্দে পুরো টেকনাফ কাঁপছে। প্রতিনিয়ত জনমনে ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিন থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসলেও কালকে সারারাত অবিরাম ভেসে আসছে।”
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, “গোলাগুলির শব্দের শেষ কোথায় জানি না। মনে হচ্ছে, মিয়ানমারে দুপক্ষের সংঘাত দিনদিন ব্যাপক আকার ধারণ করছে। আর তাদের এই বিকট শব্দে ঘুমহীন হয়ে যাচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষ।”
রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “গত শনিবার থেকে আবারও গোলাগুলি সংঘর্ষ শুরু হয়েছে মিয়ানমারের। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।”