গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর এই শিক্ষার্থী দায়মুক্তির আবেদন করেন।
Published : 30 Jan 2023, 11:55 PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের যৌন হয়রানির অভিযোগের তদন্তের মধ্যে ওই ছাত্রীর দেওয়া ‘দায়মুক্তির পত্র’ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন তিনি।
গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর তিনি এই আবেদন করেন। গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে আসা এই আবেদনের কপি থেকে তা জানা গেছে।
পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভনে একই বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ তদন্তে কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ্ এন্ড ইনফরমেটিকস্ বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের এই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, “আমি বিভিন্ন সময়ে পাবলিক হেলথ্ এন্ড ইনফরমেটিকস্ বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির দ্বারা শারীরিক, মানসিক এবং সর্বশেষ সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও নির্যাতিত হয়েছি।
‘চাকরির প্রলোভনে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন’ ও পরবর্তীতে ‘বিয়ের প্রলোভনের’ অভিযোগ তুলে এই শিক্ষার্থী বলেন, “বিয়ের প্রলোভনের বিষয়টি আমি যেন স্বীকার না করি সেজন্য আমাকে জনি বিয়ের প্রলোভন দেখায় এবং বলে যদি সব কিছু ঠিক হয়ে যায় তাহলে সে আমার কাছে ফিরে আসবে এবং সামাজিক স্বীকৃতি দেবে। আমাকে শুধুমাত্র এই বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে উপাচার্য বরাবর চার পৃষ্ঠার একটি দায়মুক্তি পত্র লিখিয়ে নেয়।”
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিন্ডিকেট সভায় এ ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এই তদন্ত কমিটি দায়মুক্তি পত্রের মাধ্যমে ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করে ওই ছাত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে চার পৃষ্ঠার এই দায়মুক্তি পত্র তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি এবং তারা এই দায়মুক্তি পত্রের উপর ভিত্তি করে ‘মিস লিড’ হচ্ছে। কিন্তু আসল সত্যটা সবার জানা উচিৎ বলে আমি মনে করি এবং সে অনুযায়ী কাজ করা উচিৎ। তাই আমি সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে বিবেকের তাড়নায় অন্তত সত্যটুকু যেন সবাই জানতে পারে এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের কাছে সাহায্য চাচ্ছি।”
গত ১৬ জানুয়ারি ওই ছাত্রীর স্বাক্ষরিত উপাচার্য বরাবর পাঁচ পৃষ্ঠার একটি আবেদনপত্রে দায়মুক্তির চিঠিটি প্রত্যাহার করার আবেদন জানান উপাচার্যের কাছে।
আবেদনের ৪ নম্বর পৃষ্ঠায় ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, “২৪ নভেম্বর জনি আমাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান এবং প্রক্টর স্যারের কাছে পরামর্শ নেওয়া হয় কীভাবে দরখাস্ত লেখা যায়। প্রক্টর স্যার কিছু পয়েন্ট বলে দেন এবং গুছিয়ে লিখতে বলেন। আরেকজন সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। লেখার সময় কিছু সাংবাদিক প্রক্টর অফিসে চলে আসে; তাই আমাকে বের করে নিয়ে অন্যত্রে নিয়ে যাওয়া হয় শৈবাল স্যারের গাড়িতে। এরপর বাকি লেখা সম্পন্ন করা হয়। পরেরদিন প্রক্টর স্যারের বাসায় আপনার (উপাচার্য) অনুমতিতে জমা দিয়ে আমি লন্ডন চলে যাই।”
এ ব্যাপারে মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, "দায়মুক্তি পত্র শব্দটি এই প্রথম শুনলাম। আমি কাউকে দিয়ে কোনো কিছুই লেখাইনি। যদি এরকম কেউ বলে থাকে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।"
দায়মুক্তি পত্র লেখানোর বিষয়ে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে প্রেসার দিয়ে লেখাতে যাব কেন? সে নিজেই প্রক্টরের বাসায় স্যারের কাছে জমা দিয়েছে; আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। প্রক্টর স্যারকে জমা দিয়েছে, স্যার ভালো বলতে পারবেন।
“দায়মুক্তিপত্রে আমি কিছুই লেখিনি। এরকম আমি কিছুই করিনি। আমি এর মধ্যে নাই।”
দায়মুক্তি লেখার সময় ‘গুছিয়ে লেখা’ এবং ‘পয়েন্ট বলে দেওয়ার’ বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “চাপে ফেলে কাউকে কোনো কিছু লেখাইনি এবং ভুক্তভোগী কী লিখেছে, কী লেখেনি আমি কোনো কিছুই জানি না এবং লেখার সময়ও আমি ছিলাম না। অফিস বন্ধ থাকায় আমার বাসায় একটি মুখবন্ধ করা চিঠি নিয়ে আসে ভুক্তভোগী। আমি সেটা খুলেও দেখিনি। আমার বাসায় এসে আমার হাতে দিয়ে গেছে, আমি উপার্চায বরাবর জমা দিয়েছি। এইটা একেবারে গোপন বিষয়। আমি গোপনভাবে জমা দিয়েছি।”
প্রক্টরের বাসায় ওই নারী একাই গিয়েছিলেন নাকি সাথে অন্য কেউ ছিল প্রশ্ন করলে প্রক্টর ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “এগুলো একেবারে গোপন কথা। এগুলো তদন্তাধীন বিষয়, এগুলো বলা যাবে না। কে ছিল না ছিল এগুলো নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।”
এ ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির আহবায়ক মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার খসরু পারভেজ।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার, গণিত বিভাগের অধ্যাপক জেসমীন আখতার, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক উম্মে সায়কা এবং সদস্য সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) মো. মাহতাব-উজ-জাহিদ।
কমিটিকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক আনোয়ার খসরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা কোনো দায়মুক্তি পত্র বা কোনো ধরনের পত্র পাইনি। তদন্ত কাজ চলমান আছে।”
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, “দায়মুক্তি পত্রটি আমি পেয়েছি; কিন্তু ভুক্তভোগী সরাসরি আমাকে দেয়নি। এটা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছে; তাই আমি এটা নিয়ে কাউকে কিছু বলব না।”
দায়মুক্তিপত্র তদন্ত কমিটির কাছে প্রেরণ করেছে কিনা জিজ্ঞেস করলে উপাচার্য উত্তর দেননি।
আরও পড়ুন