দল থেকে বহিষ্কারাদেশ না দেওয়া হলে এরা সবাই নির্বাচিত হতেন বলে মনে করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ।
Published : 13 Jun 2023, 09:50 PM
দলীয় সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যে নেতাই মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছেন, তাদের বহিষ্কার করেছে দলটি।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির এ ‘বজ্রকঠিন’ অবস্থানের মধ্যেও বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, নিচ্ছেন।
সদ্য সমাপ্ত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃতদের মধ্যে মেয়র পদে একজনসহ এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এদের মধ্যে জয় পেয়ে কাউন্সিলর হয়েছেন ৮ জন।
ফলে এই আটজন অন্তত জয়ের স্বাদ পেলেও বাকি ১১ জন আদতে দুই কূলই হারিয়েছেন।
দল থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হয়ে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ হাবিবুর রহমান ফারুক। তিনি ওই ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন।
নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী কাউন্সিলর মো. সেলিম হাওলাদার ছিলেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ হুমায়ন কবির লিংকু ওই ওয়ার্ড থেকেই কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী জিয়াউল হক মাসুম একই ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব ছিলেন, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. ফিরোজ আহম্মেদ মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ছিলেন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হুমায়ুন কবির ওই ওয়ার্ডের বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
এছাড়া সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সেলিনা বেগম ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাশিদা পারভীন নির্বাচিত হয়েছেন। এর দুজনেই মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন, তারা আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছেন।
অন্যদিকে মেয়র পদের প্রার্থী মো. কামরুল আহসান রুপন, কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমডি হাবিবুর রহমান, মো. হারুন অর রশিদ, শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, জেলা তাঁতী দলের সাবেক সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শাহীন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহ সাদি, ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, মহিলা দলের মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সামাদ শিল্পী, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ফরিদউদ্দিন হাওলাদার এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাহানারা বেগম পরাজিত হয়েছেন।
দল থেকে বহিষ্কারাদেশ না দেওয়া হলে এরা সবাই নির্বাচিত হতেন বলে মনে করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ।
তিনি বলেন, যেকোনো নির্বাচনেই রাজনৈতিক দলের পরিচয় না থাকলে নির্বাচিত হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বহিষ্কৃত যেসব নেতা পরাপজিত হয়েছেন তার মূল কারণ হলো বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারাদেশ ঘোষণা। এ ঘোষণা না দেওয়া হলে বিএনপির সব নেতাই নির্বাচিত হতেন।
“কিন্তু তারা দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও বেঈমানি করে এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। সেজন্য সব জায়গা থেকেই তারা উপেক্ষিত হয়েছেন।”
এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দ হুমায়ুন কবির লিংকু বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের প্রভাব সেভাবে থাকে না। তারপরও দল সমর্থন দিলে অন্তত দলীয় ভোটগুলো নিশ্চিত হয়। সেক্ষেত্রে নির্বাচিত হওয়া অনেকটাই সহজ হয়।”
তবে দলের সমর্থন না পেয়েও এ বছর যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবাই ব্যক্তি ইমেজের উপর ভর করে জয় পেয়েছেন বলে মনে করেন নবনির্বাচিত এই কাউন্সিলর।
৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত প্রার্থী হিসেবে জয় পেয়েছেন মজিদা বোরহান এবং সাধারণ ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন সামজিদুল কবির বাবু।
এই দুজনের বিএনপিতে কোনো পদ না থাকায় এরা বহিষ্কৃত হননি। কিন্তু এরাও স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপি ঘরানার বলেই পরিচিত।
এছাড়া এই নির্বাচনে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিজয় হয়েছেন জামায়াত ঘরানার কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান তালুকদার।