নোয়াখালী জিলা স্কুলের পাশে আবর্জনার স্তুপ, দুর্গন্ধে ‘ব্যাহত’ পাঠদান

এই আস্তাকুড়ে সৃষ্ট আগুনের ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।

আবু নাছের মঞ্জু. নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2022, 07:56 AM
Updated : 15 August 2022, 07:56 AM

নোয়াখালীর শহরের মাইজদীতে পৌর বাজারের এক পাশে স্তপ করে রাখা আবর্জনার দুর্গন্ধে জিলা স্কুলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নোয়াখালী পৌরসভায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা না থাকায় জিলা স্কুলের পাশে বাজারের মধ্যেই ময়লা আবর্জনার ভাগাড় করা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন বাজারের সব ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি পুরো শহরের আবর্জনা ফেলা হয়। এতে মারাত্মক ভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

নোয়াখালী জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূর উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রবলেন, “ময়লার দুর্গন্ধে স্কুলের শিক্ষক ছাত্রদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। কখনো কখনো এই আস্তাকুড়ে সৃষ্ট আগুনের ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পাঠদান চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

“বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও মেয়র মহোদয়কে লিখিতভাবে এবং মৌখিকভাবে জানিয়েছি। মেয়র সাহেব দুই বছর আগে বলেছিলেন, বিদেশ থেকে রিসাইক্লিন মেশিন আসার কথা আছে। সেটা আসলেই এ ময়লার স্তুপ আর থাকবে না। কিন্তু আজ অবদি এ সমস্যার সমাধান হয়নি।”

সরজমিনে দেখা যায়, জিলা স্কুলের সীমানা ঘেঁষা দক্ষিণ পাশে ফাঁকা জায়গায় শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ডাস্টবিনের ময়লা এবং বাজারের মুরগি, মাছ ও মাংসের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। আবর্জনার স্তুপের পাশেই পৌরসভার খোলামেলা পশু জবাইখানা। আবর্জনার উৎকট গন্ধ, নোংরা ও অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যেই ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে।

নোয়াখালী জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র সাফায়েত আলম চৌধুরী বলেন, “স্কুলের পাশের ময়লার দুর্গন্ধ ও ধোঁয়া বাতাসের সঙ্গে স্কুলে ঢুকে পড়ে। এ অবস্থায় ক্লাস করা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে আমাদের মেঘনা ও কর্ণফুলী ভবনে ক্লাস করা বন্ধ করা হয়েছে।”

মোহাম্মদ সাবের নামে একই স্কুলের আরেক ছাত্র বলেন, “ধোঁয়ার কারণে সৃষ্ট গ্যাসে আমাদের ফুসফুসের রোগ সহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এর কারণে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। ”

আসফাকুজ্জামান নামের আরেক ছাত্র বলেন, “পৌর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের অবহেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এই স্তুপ সরিয়ে ক্লাস করার উপযোগী পরিবেশ তৈরির দাবি করছি।”

পৌরবাজারের মাংসের দোকানদার মনির আহমেদ ও বাদশা মিয়া বলেন, “এই ময়লার স্তূপের দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বাজারে আসা ক্রেতাদের অসুবিধা হয়। এখান থেকে পোকা মাছ ও মাংসের দোকানে চলে আসে।”

“তাছাড়া ময়লার স্তুপের পলিথিনে মাঝে মাঝে আগুন ধরে যায়। তখন ধোঁয়ায় ছাত্রদের অসুবিধা হওয়ার অভিযোগ করে।” বলেন তিনি।

জেলার সিভিল সার্জন মো. মাসুম ইফতেখার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যেকোন স্থানে দীর্ঘদিন জমে থাকা ময়লা আবর্জনা থেকে হওয়া দুর্গন্ধ এবং জমে থাকা আবর্জনার বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। এতে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা দীর্ঘ মেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, “পৌরসভার মেয়রের সাথে করা বলেছি। মেয়র বলেছেন, পৌরসভার দুটি ডাম্পিং স্টেশনের কাজ শেষ হলে শহর থেকে আবর্জনার স্তুপ সরিয়ে নেওয়া হবে। মেয়রের অনুরোধে আমরা ডাম্পিং স্টেশনের জন্য সড়ক করে দিতে এলজিইডিকে বলেছি। আশা করছি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।”

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্লাহ খান সোহেল বলেন, “পৌর সভার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আধুনিক বর্জ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। যার কারণে পৌর বাজারের এক পাশে সাময়িকভাবে শহরের ময়লা রাখা হচ্ছে।

“এতে জিলা স্কুলের ছাত্রদের সমস্যা হচ্ছে এটা ঠিক। তবে আমরা আধুনিক বর্জ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর কাজ করছি। আশা করছি, আগামি ছয় মাসের মধ্যে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।”