সৈকতে ভেসে এল আরও দুটি মৃত কচ্ছপ, পেটে ১৮৫ ডিম

এই দুইটিও অলিভ রিডলি মা কচ্ছপ। তাদের সামনের ও পিছনের ফ্লিপারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2024, 09:39 AM
Updated : 20 Feb 2024, 09:39 AM

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আরও দু’টি মৃত ‘মা কচ্ছপ’ ভেসে এসেছে। যেগুলোর পেটে মিলেছে ১৮৫টি ডিম। এ নিয়ে জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩১টি মৃত ‘মা কচ্ছপ’ ভেসে এসেছে। যাদের পেটে ছিল কয়েক হাজার ডিম।

সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার সোনাপাড়া সৈকতে ভেসে আসা মৃত কচ্ছপগুলো পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম।

তিনি জানিয়েছেন, এই দুইটিও জলপাই রঙের অলিভ রিডলি মা কচ্ছপ। তাদের সামনের ও পিছনের ফ্লিপারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।

এর আগে পাওয়া মৃত কচ্ছপগুলোর শরীরে কোনো না কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল।

নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম। ডিম পাড়তে সৈকতের বালিয়াড়িতে আসার সময় জেলেদের জালে বা অন্য কোনোভাবে আঘাত পেয়ে তাদের মৃত্যু হতে পারে বলে জানান এই গবেষক।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল আরও বলেন, সৈকতে মৃত অবস্থায় ভেসে আসা কচ্ছপগুলোতে যেসব ডিম পাওয়া যাচ্ছে; সেগুলোর মধ্যে যেগুলো পরিস্ফুটনের উপযোগী তা বোরি’র ল্যাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া নষ্ট ডিমগুলো সৈকতের বালিয়াড়িতে গর্ত করে চাপা দেওয়া হচ্ছে।

বোরি’র দেওয়া তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সোনাদিয়া, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে অন্তত ৩১টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গেছে।

শুধু মাত্র গত ৬ দিনেই সৈকতে পাওয়া গেছে আটটি মৃত কচ্ছপ। যাদের পেটে ৭০০র বেশি ডিম ছিল। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে তিনটি মৃত ডলফিন, একটি মৃত স্তন্যপায়ী পরপইসও সৈকতে ভেসে এসেছে।

এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ডিম পাড়তে আসা মৃত কচ্ছপ উদ্ধারের ঘটনা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমনটা আগে কখনও হয়নি।

তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে ভেসে আসা মৃত সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বোরির তথ্য অনুসারে, সোমবার সৈকতের হিমছড়ি প্যারাসেলিং পয়েন্টে ভেসে এসেছিল ৯৫টি ডিম পেটে থাকা একটি মা কচ্ছপ। আগের দিন রোববার ভেসে আসে তিনটি মৃত মা কচ্ছপ। যাদের পেটে মিলেছে ৩১০টি ডিম। শনিবার সকালে সৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে পেটে ৯০টি ডিম নিয়ে একটি মৃত মা কাছিম ভেসে এসেছিল।

তার আগের তিন দিনে উপকূলে দেখা মিলেছে তিনটি মৃত ডলফিন, একটি মৃত পরপইস ও একটি কচ্ছপের। এর মধ্যে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে একটি এবং ইনানী সৈকতে একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। ১৫ ফেব্রুয়ারি হিমছড়ি সৈকতে মৃত ভেসে আসে আরও একটি ইরাবতী ডলফিন। সেদিন সৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহও ভেসে এসেছিল।

এছাড়া ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে একটি মৃত পরপইস।

স্তন্যপায়ী ‘ইরাবতী’ ও ‘পরপইস’ ডলফিন ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে সংরক্ষিত প্রজাতি।

গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে।

২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল।

এছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুইদিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।

পুরানো সংবাদ

Also Read: পেটে দুই শতাধিক ডিম নিয়ে সৈকতে ২ মৃত কচ্ছপ

Also Read: সমুদ্র সৈকতে দুই মৃত ডলফিন, পুঁতে রাখা হবে বালিয়াড়িতে