নিহত কিশোরের পরিবারের অভিযোগ, তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ওই কিশোরকে হত্যার পর গাড়ি দুর্ঘটনা বলছে।
Published : 17 May 2023, 01:27 AM
গাজীপুরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে এক স্কুলছাত্র নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও তার স্বজনরা বলছেন ‘হত্যাকাণ্ড’।
সোমবার রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহত কিশোরের পরিবারের অভিযোগ, তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ওই কিশোরকে হত্যার পর গাড়ি দুর্ঘটনা বলছে।
নিহত মাহফুজ ফরাজি (১৭) গাজীপুরের জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিঙ্গারদিঘী গ্রামের ফজলুল হক ফরাজির ছেলে।
স্বজনরা জানান, সে স্থানীয় প্লেজ হার্বার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ‘ও লেভেলে’ পড়ছিল। সম্প্রতি স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর থানার এসআই মো. আব্দুল্লাহ্ আল রুম্মান বলেন, “রাতে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গাড়ি পেলেও আহত কাউকে পাইনি। শুনেছি দুর্ঘটনায় আহতদের মাওনা চৌরাস্তার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
পরে পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেট কারকে উদ্ধার করেছে বলে তিনি জানান।
নিহত মাহফুজের বাবা ফজলুল হক ফরাজি বলেন, সোমবার রাতের খাবার শেষে মাহফুজ ঘরে বসেছিল। একটি প্রাইভেটকারে এক কিশোর ও তার চালকসহ আরও দুজন বাড়ির গেটে এসে গাড়িতে হর্ন দেয়।
“এরপর আমার গাড়ির চালক কাছে গিয়ে জানতে চাইলে মাহফুজকে বাড়ির বাইরে আসতে বলে ওই কিশোর। পরে মাহফুজ বাড়ির বাইরে গেলে কিছু সময় অপেক্ষা করে সবার অগোচরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
“কিছু সময় ফোন করে অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা মাওনা চৌরাস্তায় আছে বলে জানায়।”
ফজলুল হক ফরাজি বলেন, রাত সাড়ে ১০টায় মাহফুজের মোবাইল ফোন থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি দুর্ঘটনা সম্পর্কে তার মাকে জানায়। আমরা ঘটনাস্থল রাজেন্দ্রপুরে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাইনি। পরে আমরা জানতে পারি মাহফুজকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে মাওনা চৌরাস্তার আল হেরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, সেখান থেকে মাহফুজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। পরে ময়মনসিংহ থেকে মাহফুজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি তৌফিক তার বাড়িতে বেশি আসত। তাকে নিষেধ করা হলেও সে নিষেধ মানেনি। কোনো আক্রোশের কারণে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছে সে।”
ঘটনার বিষয়ে তৌফিকের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তাকে না পেয়ে যোগাযোগ করা হয় তার বাবা মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “এ ঘটনায় আমার ছেলেও আহত হয়েছে। তাকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার বিষয়ে তার ছেলের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলতে পারিনি। তবে তৌফিকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোই মিথ্যা, সাজানো।”
মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করেছেন রাজধানীর শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক গোলাম হোসেন খান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিহত মাহফুজের কপালের দিকে বড় দুটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও ঠোঁটেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কপাল এবং ঠোঁটের আঘাত দেখে মনে হয়নি এটা সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের চিহ্ন।
“আমরা মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি। প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি সম্পর্কে জানা যাবে।”
নিহতের বাবার অভিযোগ, ঘটনার বিষয়ে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও জমা নেয়নি পুলিশ।
অভিযোগ জমা না নেওয়ার বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি এএফএম নাসিম বলেন, “ভিকটিমের পরিবার থানায় পরামর্শের জন্য এসেছিলেন। এক বন্ধু তো আরেক বন্ধুকে ডেকে নিতেই পারে। যেহেতু একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে আমরা বলে দিয়েছি আপনারা গিয়ে ঘটনাস্থল নির্ধারণ করে পরে আসুন।”
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, “তুলে এনে হত্যা করা হয়েছে এমন ঘটনা জানিয়ে কেউ এখনো থানায় যোগাযোগ করেননি। আমরা দুর্ঘটনার খবরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছি। এ বিষয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।”