তীব্র তাপদাহ: চুয়াডাঙ্গায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে মানা

আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.২ ডিগ্রি।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2023, 01:51 PM
Updated : 15 April 2023, 01:51 PM

চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। টানা ১৩ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শনিবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.২ ডিগ্রি। যা ২০১৪ সালের পর আর দেখা যায়নি। সেই সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।

সেইসঙ্গে নাগরিকদের পর্যাপ্ত পানি পান করতে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে লেবুর শরবত ও স্যালাইন খাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র তাপদাহে রাস্তা-ঘাটে মানুষের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। ঘরে কিংবা বাইরে গুমট গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন।

জীবিকার তাগিদে কিংবা জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারাও বেশিক্ষণ রোদে টিকতে পারছেন না। তীব্র গরমে হাত-মুখ জ্বলছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

চুয়াডাঙ্গার শহীদ হাসান চত্বরে রিকশাচালক আজমত আলী বলেন, “আর পারচিনে, রোদে গা জ্বলছে। রিকশা চালানো যাচ্ছে না।”

সড়কের পাশে ছাতা টাঙিয়ে ফল বিক্রি করছেন আশরাফ আলী। তিনি বলেন, “রোদে তাকানো যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে চোখ বন্ধ করে বসে থাকি।

“দিনে সাত-আটবার চোখেমুখে পানি দিচ্ছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। গলা শুকিয়ে আসছে। এতো গরম আগে কখনো দেখিনি।”

সদর উপজেলার সুমিরদিয়া গ্রামের ইমামা হোসেন জানান, তীব্র তাপে বাগানের আম ঝরে পড়েছে। গাছের অর্ধেক আম থাকবে কি-না সন্দেহ আছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, “টানা ১৩-১৪ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এমন ঘটনা বিরল। গত ২ এপ্রিল প্রথম দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় এ জেলায়।

“এরপর থেকে প্রতিদিনই তাপমাত্রায় শীর্ষে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা। গত বছর ২৪ ও ২৫ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর মৌসুমের শুরুতেই তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে।”

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, “তীব্র তাপের কারণে সব ধরনের ফসলের কমবেশি ক্ষতি হতে পারে।

“এ সময় গুটি আম ঝরে পড়ে। গাছের গোড়ায় সেচ দিতে হবে। পানি ও ওষুধ স্প্রে করতে হবে। তাহলে ঝরে পড়া ঠেকানো যাবে।”

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফতেহ আকরাম বলেন, “তীব্র রোদ ও গরমে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশু ও বয়স্করা। এ অবস্থায় ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

“শিশুদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। দিনে অন্তত দুই-তিনবার লেবুর শরবত ও সেলাইন খাওয়াতে হবে।”

চুায়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, “তাপদাহের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

“কেউ বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সবাইকে তরল খাবার খেতে হবে।”

তীব্র তাপদাহের বিষয়ে রোববার জরুরি সভা ডাকা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।