নৌকার প্রার্থী হালিম সিকদার আর তার বাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় ভোট শেষ হওয়ার পরের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলেও জানান নারকেল গাছ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট।
Published : 21 Jun 2023, 07:03 PM
নারায়ণগঞ্জের গোপালদী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার মেয়র প্রার্থী হালিম সিকদারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে।
তার বিরুদ্ধে মারধর ও হুমকির অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র এক মেয়র প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট।
এছাড়া সাংবাদিকদের সামনেই ভোটকেন্দ্রে অন্য প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের নাম-ঠিকানা জানতে চান নৌকার এই প্রার্থী।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছেন, হেরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এসব মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
বুধবার বিকালে নারকেল গাছ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী তানভীর আহম্মেদের পোলিং এজেন্ট মো. সামসুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সদাসদী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নারী ভোটকেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন৷ নারকেল গাছের এজেন্ট হওয়ায় তাকে মারধর করেছেন হালিম শিকদার।
কপালের বাম পাশের ফুলে যাওয়া অংশ দেখিয়ে তিনি বলেন, “দুপুর ১টার দিকে কেন্দ্রে আসেন হালিম সিকদার৷ আমি নারিকেল গাছের এজেন্ট হয়েছি বলে মুখের উপর কয়েকটি থাবা দেন৷ আমাকে কেন্দ্র ছেড়ে চলে যেতে বলেন। সবাই এই দৃশ্য দেখেছে, কিন্তু কেউ কিছু বলেনি।”
নারকেল গাছের প্রার্থী তানভীর আহম্মেদ তার চাচাতো ভাই জানিয়ে সামসুদ্দিন বলেন, “ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত যামু না৷”
হালিম সিকদার আর তার বাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় ভোট শেষ হওয়ার পরের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলেও জানালেন এই এজেন্ট।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই বুথে দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, “রানিং মেয়র ১টার দিকে কেন্দ্রে এসেছিলেন। তখন এমন কোনো ঘটনা ঘটছে বলে দেখিনি৷ কেউ অভিযোগও করেনি৷”
মারধর ও হুমকির এমন অভিযোগের ওঠার পর এই কেন্দ্রটির পাঁচটি বুথ ঘুরে তিনটিতেই নারকেল গাছের পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি৷
সদাসদী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নারী ও পুরুষ কেন্দ্রের বুথগুলোয় থাকা অন্য প্রার্থীর এজেন্টরা নাম প্রকাশ না করে জানান, সকাল থেকে এজেন্টরা ছিলেন, কিন্তু দুপুরে মেয়র কেন্দ্রে ঢোকার পর তারা বেরিয়ে যান, আর ফেরেননি৷
একই কেন্দ্রের ২ নম্বর বুথে থাকা নারকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট মো. ইসমাইল অভিযোগ করে বলেন, “সারাদিন নৌকার এজেন্ট গোপন কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেছে৷ ভয়ে কেউ প্রতিবাদও করতে পারেনি।”
যদিও এসব ঘটনার কোনো অভিযোগ পাননি বলে দাবি কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়ার৷
তিনি বলেন, “হালিম সিকদার এসেছিলেন, কিন্তু তিনি কাউকে হুমকি দিয়েছেন এমন অভিযোগ কেউ করেনি৷ মারধরের কোনো অভিযোগও পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে হাতপাখা ছাড়া সব প্রার্থীর এজেন্টই কেন্দ্রে ছিলেন৷ কেউ হয়তো নিজেদের প্রয়োজনে বেরিয়ে গেছেন।”
সদাসদী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে জগ ও মোবাইল ফোন প্রতীকের পোলিং এজেন্টদেরও পাওয়া যায়নি৷ অন্য প্রার্থীর এজেন্টরা জানান, সকালে এলেও দুপুরে চলে যান তারা।
বেলা সাড়ে ৩টার এই কেন্দ্র পরিদর্শনে যান হালিম সিকদার৷ এ প্রতিবেদক সেসময় কেন্দ্রটিতে উপস্থিত ছিলেন৷
দেখা যায়, কেন্দ্রটির বুথগুলোয় ঘোরার সময় কে কোন প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট হয়েছেন তা জানতে চান তিনি৷ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের কার কোন গ্রামে বা কোন পাড়ায় বসবাস তাও জেনে নিচ্ছিলেন নৌকার এই মেয়র প্রার্থী৷
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুইবারের মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হালিম সিকদার৷
তিনি বলেন, “প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হেরে যাবার পরিস্থিতি তৈরি হলে এসব মিথ্যা অভিযোগ করেন৷ আমি কাউকে হুমকিও দেইনি, মারধরও করিনি৷ এসব অভিযোগ মিথ্যা৷”
এর আগে সকালে সাংবাদিকদের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, নৌকার প্রার্থীর এজেন্টরা গোপন কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা কোন প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন তা পর্যবেক্ষণ করছেন৷ নৌকার বাইরে ভোট দিলে ভোটারদের মারধর করছেন৷ তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন৷
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রামচন্দ্রদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ ভোটকেন্দ্রের একটি বুথে দু'জন ব্যক্তিকে গোপন কক্ষের পর্দা সরিয়ে উঁকি দিতে দেখা যায়৷ তারা নিজেদের কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট বলে পরিচয় দিলেও তাদের একজনের গলায় নৌকার প্রার্থীর কার্ড ঝোলানো দেখা যায়৷