বরিশালের উজিরপুরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মারধরের শিকার হয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা।
রোববার সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
আহত ইদ্রিস সরদার (৪৫) উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
কুচকাওয়াজের জন্য সরকারি ডব্লিউ বি ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে যান উপজেলা প্রশাসন, পৌর মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
কিন্তু বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম ও উজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল মাঠে না গিয়ে আলোচনা সভার স্থান সভাকক্ষের সামনে ছিলেন।
ইদ্রিস সরদার বলেন, তিনি সেখানে গিয়ে সংসদ সদস্যকে সালাম দেন। তখন হাফিজুর রহমান ইকবাল তাকে কটুক্তি করেন। তিনি প্রতিবাদ করলে দুই জনের মধ্যে তর্ক হয়।
“এক পর্যায়ে এমপির সামনেই ইকবাল আমাকে মারধর শুরু করে। এ সময় ইকবালের ক্যাডার কাজী রিয়াজ, পলাশ তালুকদার, রুবেল হোসেন, ইদ্রিসসহ ৭-৮ জন এলোপাতারিভাবে কিল-ঘুষি দিয়ে আমাকে রক্তাক্ত আহত করেছে।”
ইদ্রিস জানান, পরে অন্যান্য নেতারা এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছে। এ ঘটনায় জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্বান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে হাফিজুর রহমান ইকবাল সেখানে মারামারি হয়েছে বলে স্বীকার করলেও তবে সেটা তার ও সংসদ সদস্যের সামনে হয়নি বলে দাবি করেছেন।
ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ও সংসদ সদস্য মিলনায়তনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে ইদ্রিস একটু ‘বেয়াদপি আচরণ’ করেছে। পরে ৩০/৪০ গজ দূরে তার লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে। তখন এমপি লোকজনকে থামানোর নির্দেশ দেন।
ইকবাল বলেন, তিনি অসুস্থ হওয়ায় বাসায় চলে যান। বাসায় গিয়ে শুনতে পেয়েছেন ইদ্রিসকে মারধর করেছে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আরও ইকবাল জানান, এ বিষয় নিয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ তাকে ‘ফোন করে রাগারাগি’ করেছেন। নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন।
হাফিজুর রহমান ইকবাল গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। পরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে হেরে যান। নির্বাচন করায় তিনি বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।
পরে সাধারণ ক্ষমায় বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন তিনি।
বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম বলেন, “আমার সামনে মারামারি শুরু হয়নি। তবে কিছুটা দূরে মারামারি হতে দেখে আমি গিয়ে তাদেরকে সরিয়ে দেই।”
এ দিকে এ ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শাহে আলম উপস্থিত থাকায় তাতে অংশ নেননি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু, পৌর মেয়র গিয়াসউদ্দিন বেপারীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা চেয়ারম্যান বাচ্চু বলেন, “একটি মহল স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে হামলা করে সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।”
বিতর্কিত ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে থাকায় তারা তাতে অংশ নেননি বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান।
উজিরপুর মডেল থানার ওসি মো. কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”