কক্সবাজার শহরের উপকূলবর্তী এলাকায় একটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, রোববার বেলা ৩টার দিকে শহরের বাঁকখালী নদীর মোহনার নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, “মরদেহগুলো অর্ধগলিত অবস্থায় পাওয়া গেছে; তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। এর কারণে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।”
নাজিরারটেক পয়েন্টের স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল বিকাল ৪টার দিকে একটি জেলে নৌকা মাছ ধরে ফেরার পথে উপকূলের অদূরবর্তী সমুদ্রে একটি অর্ধনিমজ্জিত মাছ ধরার ট্রলার দেখতে পায়। তাদের ধারণা হয়, দুদিন আগের ঝড়ে হয়তো ট্রলারটি ডুবে গেছে। জেলেরা ট্রলার ফেলে চলে এসেছে। তখন তারা এই ট্রলারটিকে টেনে উপকূলের কাছাকাছি নিয়ে আসেন।
“সন্ধ্যার দিকে স্থানীয়রা সেই মাছ ধরার ট্রলারে একজনের পা দেখতে পান। তখন তারা বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। কাউন্সিলর বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
রুবেল বলেন, খবর পেয়ে রাতে পুলিশ আসে। কিন্তু তখন ট্রলারটি উপকূল থেকে খানিকটা দূরে সমুদ্রের দিকে চলে যায়। পুলিশ সেখানে যেতে পারেনি। ফলে তারা ফিরে যায়।
সকালে পুলিশ আবারও ঘটনাস্থলে যায় এবং জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার অপেক্ষা করতে থাকে। পুলিশ এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের খবর দেয়।
ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা খান খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার পর আমরা একটা ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে ট্রলারটির কাছে যাই। ট্রলারটি একদিকে কাত হওয়া ছিল।
“মরদেহগুলো মাছ ধরার ট্রলারের কোল্ড স্টোরেজের ভিতরে তালাবাদ্ধ অবস্থায় ছিল। সেখানে একটার উপর আরেকটা মরদেহ স্তুপ করা ছিল।
“ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন আগের। চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে এবং পঁচা দুগন্ধ বেরচ্ছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন বোঝা যাচ্ছে না। তবে হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে।”
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, “এরকম একটি খবর আমাদের কাছে ছিল যে, ১০ থেকে ১২ দিন আগে কিছু লোক সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছে কিংবা সাগরে মাছ ধরার জন্য বের হয়েছে বলে তাদের বাড়িতে বলেছে। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।
“যদিও এ সংক্রান্ত দাপ্তরিক কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কিন্তু এ ধরনের তথ্য মাঝে কিছু শুনেছিলাম।”
“মরদেহগুলো বাংলাদেশের নাগরিকদের বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহগুলো শনাক্ত করা গেলে হত্যার কারণ হয়তো জানা যেতে পারে।
এরই মধ্যে সিআইডির ক্রাইম সিন ও পিবিআইকে ডাকা হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।