যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডেকে নিয়ে এক নারী হত্যাকারীদের হাতে তুলে দেন বলে জানান শেরপুর পুলিশ সুপার।
Published : 01 Apr 2024, 08:55 PM
পারিবারিক বিরোধে শেরপুর সদরে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান ও দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন শেরপুর পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম।
রোববার সকালে সদর উপজেলার চর পক্ষীমারী ইউনিয়নের চুনিয়ারচর এলাকা থেকে প্রবাসী আব্দুল হালিম জীবনের (৪৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় আব্দুল হালিমের দ্বিতীয় স্ত্রী আতিয়া আক্তার বাদী হয়ে শেরপুর সদর থানায় মামলা করেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সদর উপজেলার চরপক্ষীমারি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ (৪৫), একই ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে মোবারক মোস্তাক (৩২), মো. আফিল উদ্দিনের ছেলে মো. রকিব হোসেন জিহাদ (২০), হযরত আলীর ছেলে মো. কালু মিয়া (২৫), শেরপুর শহরের পূর্ব শেরী এলাকার ফারুক আহাম্মেদের স্ত্রী রুপা বেগম (২৮), কান্দা শেরীচর এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪০)।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে জিহাদ ও কালু ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা আব্দুল হালিমকে হত্যার সময় আহত হয়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম বলেন, আব্দুল হালিম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। ২৫ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে দুই বছর আগে দেশে ফেরেন তিনি। সেখানে তার এক স্ত্রী আছেন; তবে এই দম্পতি নিঃসন্তান।
“দেশে ফিরে সন্তানের আশায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন আব্দুল হালিম। বিয়ের পর জমি জায়গাসহ পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে বাবা-মা ও ভাইদের সঙ্গে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে ছয়টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় আব্দুল হালিমের বাবা ছায়েদুর রহমান দেড় মাস কারাভোগের পর এক সপ্তাহ আগে জামিনে মুক্ত হন।
“আব্দুল হালিমকে শায়েস্তা করতে তার পরিবার শাহীনের শরণাপন্ন হয়। পরে শাহীন বিষয়টি নিয়ে তার ব্যবসায়িক অংশীদার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে আব্দুল হালিমকে হত্যা করতে আব্দুর রউফ তার বেশ কয়েকজন সহযোগীকে নির্দেশ দেন।”
পুলিশ সুপার বলেন, “পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কালু তার পূর্ব পরিচিত মনোয়ারা বেগম ও রুপা বেগমের সহযোগিতা নেন। আব্দুল হালিমের সঙ্গে রুপা বেগম প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ৩০ মার্চ বিকালে রুপা মোবাইল ফোনে আব্দুল হালিমকে ডেকে নিয়ে হত্যাকারীদের হাতে তুলে দেন।
“সেখানে আব্দুল হালিমকে একটি ঘরে আটকে রেখে সারা দিন নির্যাতন করে রাত ৯টা দিকে অপহরণের নাটক সাজানো হয়। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনে আব্দুল হালিমের স্ত্রীর কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। পরে আব্দুল হালিমকে ব্রহ্মপুত্র চরে নিয়ে হত্যা করা হয়।”
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ছয়জন গ্রেপ্তার করা হলেও তদন্তে জড়িতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম।
গ্রেপ্তার দুই নারী সোমবার বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে শেরপুর কোর্টের পরিদর্শক কে এম শহীদুল হক জানান।
আরও পড়ুন: