নীলফামারীতে বিএনপি মঞ্চ ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

পরে দুই দলই নিজ নিজ জায়গায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2023, 01:56 PM
Updated : 25 Feb 2023, 01:56 PM

নীলফামারীতে ৫০ গজের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মুখোমুখি মঞ্চ তৈরির পর সেখান থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উত্তেজনা ছড়ায় গোটা জেলা শহরে। এ সময় বিএনপির মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়।

শনিবার দুপুরের এ ঘটনায় দুই দলই একে অপরকে দোষারূপ করছে। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ ‘শান্তি সমাবেশ’ এবং বিএনপি ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে।

নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক আব্দুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, “পাশাপাশি দূরত্বে দুই দলের কর্মসূচি ঘোষণার কারণে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে বিএনপি জানায়, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি শেষে তারা তাদের কর্মসূচি পালন করবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মসূচি শুরু হলে বিএনপির সভাস্থল থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পৌর সুপার মার্কেটের উত্তর অংশে শান্তি সমাবেশ শুরু করে জেলা আওয়ামী লীগ। কাছাকাছি সময়ে মার্কেটের দক্ষিণ অংশে তৈরি করা মঞ্চে পদযাত্রার সূচনার জন্য সমবেত হয় জেলা বিএনপি একাংশের নেতাকর্মীরা।

উভয় মঞ্চ থেকে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেওয়ায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টির হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের জমায়েত থেকে কিছু কর্মী গিয়ে বিএনপির মঞ্চে হামলায় চালায়। মঞ্চে থাকা চেয়ার ভাঙচুর করা হয় এবং টানানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে তারা। তখন বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিহত করতে এলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

জেলা বিএনপির সভাপতি আ. খ. ম আলমগীর সরকার বলেন, “আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ কর্মসূচি শেষ করলে আমরা শুরু করবো। আমাদের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থান থেকে পথযাত্রা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হচ্ছিলেন। এ অবস্থায় বিনা উসকানিতে আওয়ামী লীগের নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের সভাস্থলে হামলা চালিয়ে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং চেয়ার-টেবিলসহ মঞ্চ ভাঙচুর করে।“

জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আক্তারুজ্জামান বলেন, “এতে আমাদের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে মঞ্চ ভাঙচুর, ব্যানার ছেঁড়া হলেও পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি।”

তবে বিএনপির মঞ্চে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের সভা শুরু হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে অশ্লীল কথাবার্তা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। তখন আমাদের কয়েকজন ছেলে সেখানে গিয়ে তাদের নিষেধ করেছে মাত্র, আর কিছুই করা হয়নি।”

মমতাজুল অভিযোগ করেন, “বিএনপির নেতাকর্মীদের বারণ করতে যাওয়ায় তারাই আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়।“

শেষে দুই দলের কর্মসূচি

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর দুপুর ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ পুনরায় তাদের সভাস্থলে সমাবেশ শুরু করে। দুপুর ১টার দিকে সভা শেষ করে মিছিল নিয়ে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. হাফিজুর রশিদ মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, সহসভাপতি অক্ষয় কুমার রায়, মো. আমজাদ হোসেন, আহসান রহিম মঞ্জিল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াদুদ রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুশফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল হাসান আপেল, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার।

আওয়ামী লীগের সমাবেশ শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বড়বাজার ট্রাফিক মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

জেলা বিএনপির সভাপতি আ. খ. ম আলমগীর সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সহসভাপতি মীর সেলিম ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আক্তারুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক সেফাউল জাহাঙ্গীর, জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সাল কমেট, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আজম, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মারুফ পারভেজ প্রিন্স।

অপরদিকে দুপুরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলমের নেতৃত্বে শহরের বড় বাজারে পৃথক পদযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারা শহরের গাছবাড়ি থেকে পদযাত্রা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসার পথে পুলিশের বাধায় বড় বাজার ট্রাফিক মোড়ে সমাবেশ করে।

সেখানে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোস্তফা প্রধান হক বাচ্চুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. মাহবুব উর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আল মাসুদ চৌধুরী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাহেদুল ইসলাম দোলন, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক মগ্নি মাসুদুল আলম।