দুই দিনের মধ্যে ঘটনাটি তদন্ত করে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
Published : 26 Dec 2023, 10:12 PM
মাদারীপুর-৩ আসনে ‘নৌকা প্রার্থীর বৈঠকে’ অংশ নেওয়ায় ৩৭ শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে; যারা আসনটির বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।
ঘটনাটি তদন্ত করে দুই দিনের মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী।
সোমবার সকালে মাদারীপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বাসভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
তিন মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনের ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের উদ্দেশে মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান খান বক্তব্য দিচ্ছেন। পাশে ছিলেন সংসদ সদস্য শাজাহান খান।
সেখানে ওবায়দুর রহমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা শাজাহান খানকে মাদারীপুর-৩ আসনের ওপরে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে প্রচার চালাতেও বলেছেন। সেই হিসেবে আমরা আসনটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালন করতেছি।
“আপনারাও সেইভাবে দায়িত্ব পালন করবেন; যাতে আমার গোলাপ ভাইকে নির্বাচিত করতে পারি। তাহলে দাদা (শাজাহান খান) ও গোলাপ ভাই মিলে দীর্ঘদিনের জন্য মাদারীপুরকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসতে পারবেন।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, নির্বাচনের বিষয়ে সভার কথা বলে তাদেরকে বাসায় ডাকে নেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি সদর উপজেলা শিক্ষক সমাজের সভাপতি। সভাটি হওয়ার কথা ছিল উপজেলা পরিষদে। কিন্তু সেখানে না হয়ে এমপির (শাজাহান খান) বাসায় হয়েছে।
মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাজাহান খান তার নির্বাচনি এলাকার পছন্দের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্ট করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন মাদারীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন।
তিনি বলেন, “শাজাহান খানের বাসায় হওয়া সভায় উপস্থিত শিক্ষকরা তারা কর্মী। তারা নির্বাচনে কোনো দায়িত্ব পালন করলে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিম বলেন, যারা ওই সভায় ছিলেন তাদেরকে জেলা থেকে শোকজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।
মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়। আগামী দুই দিনের মধ্যে ঘটনাটি তদন্ত করে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
সেইসঙ্গে ওই ৩৭ শিক্ষককে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলার ডিসি ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মারুফুল রশিদ খান বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমরা ৩৭ শিক্ষককে প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারেবন না।
এ ব্যাপারে জানতে রাতে আওয়ামী লীগ নেতা শাজাহান খানের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে তিনি তা কেটে দেন।